ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সব ইউনিটের ফলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সব ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল।

প্রকাশিত ফলাফলে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে পাসের হার ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বিজ্ঞান ইউনিটে এ হার ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় ইউনিটে পাসের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর চারুকলা ইউনিটে পাসের হার ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা-তিন শাখা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রয়াত ডিন এবং কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের সমন্বয়ক জিয়া রহমান গত শনিবার ভোরে মারা গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে এই ইউনিটের ফলাফল প্রস্তুতের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। আজ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও দুই সহ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ ও সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ পদস্থ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষা৷ এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট ও ১ মার্চ বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষা হয়৷ ৯ মার্চ চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষার (সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্কন) মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়৷

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মোট আসন ৫ হাজার ৯৬৫টি৷ চারটি ইউনিটে আবেদন করেছিলেন ২ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী৷ কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে ২ হাজার ৯৩৪ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ১২ হাজার ২২৫ জন (আসনপ্রতি প্রতিযোগী ৩৮ জন)৷ বিজ্ঞান ইউনিটে ১ হাজার ৮৫১ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮০ জন (আসনপ্রতি ৬৬ জন)৷ ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ১ হাজার ৫০ আসনের বিপরীতে ৩৭ হাজার ৬৬০ জন (প্রতি আসনে ৩৬ জন) আর চারুকলা ইউনিটে ১৩০ আসনের বিপরীতে ৭ হাজার ৩৭ জন আবেদন করেছিলেন (আসনপ্রতি ৫৪ জন)৷

ভর্তি পরীক্ষায় চারুকলা ইউনিট ছাড়া অন্য ইউনিটগুলোতে ৬০ নম্বরের বহুনির্বাচনী ও ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে৷ শুধু চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের বহুনির্বাচনী ও ৬০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ চারুকলা ইউনিটের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার জন্য ৩০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৬০ মিনিট সময় ছিল৷ অন্য ইউনিটগুলোতে বহুনির্বাচনী পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল৷ ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে মূল পরীক্ষায় ১০০ এবং মাধ্যমিক বা সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আছে ২০ নম্বর৷

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় যাঁরা

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে অংশ নেন ১ লাখ ২ হাজার শিক্ষার্থী। আগের ‘ঘ’ ইউনিট বিলুপ্ত করে গঠিত এই ইউনিটে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ২৭৫ জন। পাসের হার ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ৷ এ ইউনিটের মাধ্যমে বিজ্ঞান শাখার ৯৪৪ জন, মানবিক শাখা থেকে ১ হাজার ৭০৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ২৮৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে মানবিক শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন খুলনার সরকারি এম এম সিটি কলেজের ছাত্রী প্রিয়ন্তি মণ্ডল। তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০৫ দশমিক ২৫ (মূল পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ২৫)। বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী জুবায়দা জাহান। তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০২ দশমিক ৩৪ (মূল পরীক্ষায় ৮৩)। এই ইউনিটে ব্যবসায় শিক্ষা থেকে প্রথম হয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ইসরাত জাহান। তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৬ (মূল পরীক্ষায় ৭৬)।

বিজ্ঞান ইউনিটে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৬৩ জন অংশ নেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৭২৩ জন। পাসের হার ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ইউনিটের মাধ্যমে বিজ্ঞান শাখার ১ হাজার ৭৭৫ জন, মানবিক শাখা থেকে ৫১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

বিজ্ঞান ইউনিটে বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন ঢাকার নটরডেম কলেজের ছাত্র প্রতীক রসূল। তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ১১১ দশমিক ২৫ (মূল পরীক্ষায় ৯১ দশমিক ২৫)৷ মানবিক শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ছাত্রী নাফিসা তাবাসসুম৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৮ দশমিক ৫০ (মূল পরীক্ষায় ৭৮ দশমিক ৫০)৷ ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৪ (মূল পরীক্ষায় ৭৪)৷
ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪ হাজার ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী৷ উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮২ জন৷ পাসের হার ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ৷ এই ইউনিটের মাধ্যমে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ৯৩০ জন, বিজ্ঞান শাখার ৯৫ জন এবং মানবিক থেকে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন৷

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্রী অথৈ ধর৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০৫ দশমিক ৫০ (মূল পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ৫০)৷ বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন বি এ এফ শাহীন কলেজের ছাত্র মাহতাব সরকার৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯২ দশমিক ৫০ (মূল পরীক্ষায় ৭২ দশমিক ৫০)৷ এই ইউনিটে মানবিক শাখা থেকে প্রথম হয়েছেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ছাত্র রিদওয়ানুল করিম৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ১০১ (মূল পরীক্ষায় ৮১)৷

চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষায় ৪ হাজার ৫১০ জন অংশ নিয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে ৫৩০ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ পাসের হার ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ৷

চারুকলা ইউনিটে প্রথম হয়েছেন রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ কলেজের ছাত্র মো. বাঁধন তালুকদার৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৮ দশমিক ১৬ (মূল পরীক্ষায় ৭৯)৷ দ্বিতীয় হয়েছেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ইরিন জাহান অন্তরা৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৮ (মূল পরীক্ষায় ৭৮)৷ তৃতীয় হয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ কলেজের ছাত্র রিভু রোদ্দুর৷ তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৯৩ (মূল পরীক্ষায় ৭৪)৷

যেভাবে জানা যাবে ফল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিস্তারিত ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জানা যাচ্ছে৷

এ ছাড়া যেকোনো অপরাটেরের মুঠোফোন নম্বর থেকে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য  DU ALS Roll No, বিজ্ঞান ইউনিটের জন্য DU SCI Roll No, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের জন্য DU BUS Roll No এবং চারুকলা ইউনিটের জন্য DU FRT Roll No টাইপ করে ১৬৩২১ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ফিরতি এসএমএসে ফলাফল জানা যাচ্ছে৷

কিছু জরুরি তারিখ

উত্তীর্ণ ও ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আগামী ৩ এপ্রিল বিকেল তিনটা থেকে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ফরম ও বিষয়ের পছন্দক্রম ফরম পূরণ করতে হবে৷ বিষয় পছন্দক্রম অনলাইনে দেওয়ার সুবিধার্থে ১ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের ভর্তিযোগ্য বিষয়ের তালিকা ওয়েবসাইট থেকে নামাতে পারবে৷ তালিকাটি প্রিন্ট করে তাতে পছন্দক্রম আগে লিখে রাখলে পছন্দক্রম অনলাইনে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল এড়ানো যাবে৷

বিভিন্ন কোটায় আবেদনকারীদের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে কোটার ফরম সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন কার্যালয় থেকে সংগ্রহ এবং যথাযথভাবে তা পূরণ করে ডাউনলোড করা বিষয় পছন্দক্রমের কপিসহ ওই সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ডিনের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে৷

ফলাফল নিরীক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের কার্যালয়ে এক হাজার টাকা ফি দেওয়া সাপেক্ষে ৩১ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস চলাকালীন সময়ে আবেদন করা যাবে।