কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাস কখনো ভালো নয়

বাংলা: সহপাঠ–কাকতাড়ুয়া

প্রশ্ন

ক. কাকতাড়ুয়া কী? বুঝিয়ে লেখো।

খ. ‘কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাস কখনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না’—কথাটি ‘কাকতাড়ুয়া’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

উত্তর–ক

কাকতাড়ুয়া হলো ফসলের খেতে স্থাপিত মানুষের একধরনের প্রতিকৃতি। সাধারণত ফসলের জন্য ক্ষতিকর প্রাণীদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই কাকতাড়ুয়া তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে পশুপাখিকে খেতের ফসল ও বীজের ক্ষতি করতেও নিরুৎসাহিত করা হয়। মানুষের দৈহিক গড়নের সঙ্গে মিল রেখে কাকতাড়ুয়া বানানো হয়। এই কাকতাড়ুয়াকে সাজানো হয় পুরোনো-পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে অনেকটা সং-এর মতো করে। সাধারণত খেতের মাঝামাঝি অবস্থানে গর্ত করে এই কাকতাড়ুয়া পুঁতে রাখা হয়।

উত্তর–খ

বাঙালির ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রকার, কল্পকাহিনি লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা ‘কাকতাড়ুয়া’ গল্পে কুসংস্কার ও এর ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

গল্পের প্রধান চরিত্র মৃগাঙ্কবাবু একজন খ্যাতনামা লেখক। একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তিনি কলকাতা ফিরছিলেন। পথের মাঝখানে এক জায়গায় এসে তাঁর গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে যায়। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে তেল আনতে যান। মৃগাঙ্কবাবু একাকী অচেনা পরিবেশে পথের ধারেই আটকে থাকেন। এ সময় তিনি বাইরের খোলা মাঠে একটি কাকতাড়ুয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। চারিদিকে ধু ধু মাঠ আর তার মাঝখানেই কাকতাড়ুয়াটি একাকী দাঁড়িয়ে আছে। কাকতাড়ুয়ার গায়ের শার্টটি তাঁর কাছে অনেক চেনা মনে হয়। লাল-কালো ছিটের সেই জামা দেখে তাঁর তিন বছর আগে তাড়িয়ে দেওয়া গৃহকর্মী অভিরামের কথা মনে পড়ে যায়। কেননা, ঠিক এ রকমই একটি শার্ট ছিল অভিরামের। স্বর্ণের ঘড়ি চুরির অভিযোগে মৃগাঙ্কবাবুর বাবা তাকে তখন তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য অভিরামই যে সেই ঘড়িটি চুরি করেছে, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জনৈক ওঝার কথায় তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। অভিরাম পরবর্তী সময় চরম অর্থকষ্টে পড়ে ও রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করে। সেই অভিরামই কাকতাড়ুয়ারূপে লেখককে জানায় যে বাড়িতে আলমারির নিচে পেছনের দিকটায় ঘড়িটি এখনো পড়ে রয়েছে। আসলে এতক্ষণ এসব তিনি গাড়িতে বসে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে দেখেছেন। পরে অবশ্য বাড়িতে ফেরার পর যথাস্থানে তিনি ঘড়িটি পেয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন যে ওঝার কথা ঠিক ছিল না। কুসংস্কারের কারণেই ওঝার কথা বিশ্বাস করেছিলেন মৃগাঙ্কবাবুর বাবা। আর তারই নির্মম বলি হয়েছিল নিরপরাধ অভিরাম।

ওপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, মৃগাঙ্কবাবুর বাবার কুসংস্কারের প্রতি অন্ধবিশ্বাসের ভয়াবহ কুফল নেমে এসেছে নির্দোষ গৃহকর্মী অভিরামের ওপর। তাই বলা যায় যে কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাস কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না।

*লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা