নয়া পত্তন অর্থ হলো নতুন সূচনা

বাংলা: সহপাঠ–কাকতাড়ুয়া

প্রশ্ন

ক. শনু পণ্ডিত শহরে গিয়েছিলেন কেন?

খ. ‘নয়া পত্তন’ গল্পে নয়া পত্তন ঘটে কীভাবে, বিচার করো।

উত্তর–ক

শনু পণ্ডিত বাইশ বছর বয়সে এনট্রান্স পাস করেন। তাঁর প্রস্তাবে পঁচিশ বছর আগে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন জুলু চৌধুরী। অনেক দিনের পুরোনো স্কুলটি ঝড়ে ভেঙে পড়ে। তাই নতুন স্কুল নির্মাণের জন্য সাহায্য পাওয়ার আশায় তিনি শহরে যান।

অনেক আশা–ভরসা নিয়ে শনু পণ্ডিত শহরে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন কিছু টাকাপয়সা সাহায্য পেলে আবার স্কুলটিকে নতুন করে দাঁড় করাবেন। আবার শুরু করবেন গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর কাজ। কিন্তু স্কুলটির জন্য কেউ সাহায্য–সহযোগিতা দিতে রাজি হয়নি। শনু পণ্ডিত যে আশা নিয়ে শহরে গিয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরে আসেন।

উত্তর–খ

‘নয়া পত্তন’ শব্দের অর্থ নতুন সূচনা বা আরম্ভ। গল্পের শুরুতেই আমরা দেখি পঁচিশ বছর আগে নির্মিত গ্রামের একমাত্র স্কুল ঝড়ে ভেঙে যায়। সেটি নতুন করে নির্মাণের জন্য অর্থ প্রয়োজন। আর এই অর্থ জোগাড় করার জন্যই তিনি শহরে যান।

শনু পণ্ডিত ভেবেছিলেন কিছু অর্থ পেলে স্কুলটি আবার নতুন করে নির্মাণ করতে পারবেন। কিন্তু কেউ তাঁকে সাহায্য করে না। সরকারও সাহায্য করে না, এমনকি স্কুলের প্রধান দাতা জুলু চৌধুরীও করেননি। সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তিনি অপমানিত হন। আর জুলু চৌধুরী সাহায্যের কথা শুনে আঁতকে ওঠেন। সম্ভবত তিনি চান না গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক।

গ্রামের সাধারণ মানুষ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। শনু পণ্ডিত ফিরে এসে তাদের সাহায্য না পাওয়ার কথা জানান। সবাই যখন হাল ছেড়ে দেয়, তখন তকু শেখ রুখে ওঠে। বুড়ো হাসমত হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে তারাই স্কুল দেবে বলে ঘোষণা দেয়। তার কথা শুনে লাফিয়ে ওঠে সম্মতি জানায় তোরাব আলীও। শুরু হয় এক নতুন লড়াই। কেউ শণ কেউ বাঁশ, কেউ বেত দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। নিজেরাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়ল স্কুল নির্মাণের কাজে। একজন রান্না করতে শুরু করল শিরনি। ফলে সন্ধ্যা হতে না হতেই স্কুলটি আবার নতুন করে নির্মাণ হয়ে যায়। স্কুল নির্মাণ শেষে চাষি তোরাব আলী স্কুলের নামফলকের আগের নাম পরিবর্তন করে লেখে ‘শনু পণ্ডিতের ইস্কুল’। সবাই একসঙ্গে কাজ করে তারা বুঝিয়ে দেয় সরকার ও চৌধুরী ছাড়াও তাদের জীবন চলতে পারে।

অন্যের ওপর নির্ভরতা ঝেড়ে ফেলে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে। একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যে সফল হওয়া যায়, তা প্রমাণ করে তারা এক নতুন জীবনের সূচনা করে। আর এভাবেই ‘নয়া পত্তন’ গল্পে ঘটে নয়া পত্তন।


মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা