শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাউশির দিক-নির্দেশনা, চলবে শিখন কার্যক্রম

প্রথম আলো ফাইল ছবি

ডেঙ্গুয় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ৫০৬ জন মারা গেলেন। আর চলতি মাসে গতকাল বুধবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৫৫ জনের। এ অবস্থায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার চার মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গতকাল শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, ৩০ আগস্ট দুটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের করণীয় কী হবে, তা শেখানো হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্কুল ও নিজ বাসার আঙিনা পরিষ্কার করার পদ্ধতি শেখানো হবে। এসব কার্যক্রম মূল্যায়ন হিসেবে ধার্য হবে এবং নম্বর দেবেন শিক্ষকেরা। এ নম্বর পরে মূল নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে। প্রথম সভাটি অঞ্চলের পরিচালকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের উপপরিচালক (মাধ্যমিক), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজারদের সমন্বয়ে আয়োজন করবেন। উক্ত সভায় এ কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করবেন এবং নির্দেশিকার করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

আরও পড়ুন
অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এ কার্যক্রম ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতার মূল্যায়ন করবেন। দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একক ও দলগত পারদর্শিতার দিকে লক্ষ রাখবেন। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ৫০ শতাংশ চূড়ান্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নে যোগ করবেন।

শিখন কার্যক্রম ৩১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রকল্পভিত্তিক শিখন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মাউশি। ৩১ আগস্ট থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু সম্পর্কে ধারণা পাবে ও এর বিস্তার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালনের দক্ষতা অর্জন করবে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। মাউশির জারি করা পরিপত্রে বিষয়টি সব সরকারি-বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এ শিখন কার্যক্রমের বিষয়ে জানানো হয়। একই সঙ্গে এ কার্যক্রমের প্রকল্প নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে অধিদপ্তর।

ফাইল ছবি

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৩১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টি, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে প্রকল্পভিত্তিক এ শিখন কার্যক্রমে অংশ নেবে। এর মাধ্যমে সব শিক্ষার্থী ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে ধারণা পাবে, পাশাপাশি সচেতন হবে এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ, সূক্ষ্মচিন্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান ও সৃজনশীল দক্ষতা অর্জন করবে। তবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা অবলম্বন করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরও পড়ুন

শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানের ভূমিকা

এ কার্যক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ও অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব পালন করবেন। দলগত এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের দল গঠন, তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনের বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করবেন শিক্ষকেরা। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক এ কার্যক্রমে অংশ নেবেন ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মূল্যায়নে অংশ নেবেন। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সমন্বয় করবেন ও পুরো কার্যক্রম সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করবেন।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি শ্রেণির ১০ জন শিক্ষার্থীকে একেকটি দলে অন্তর্ভুক্ত করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতি দলের জন্য একজন দলনেতা নির্বাচন করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে দলনেতা পরিবর্তন করতে হবে। ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী দলনেতা হওয়ার সুযোগ পাবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের যোগাযোগ স্থাপন হবে।

আরও পড়ুন

প্রকল্প ডায়েরি

এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা একক কাজ, দলগত কাজ, প্রদর্শন, ভূমিকাভিনয়, মুক্ত আলোচনা ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে তাদের ধারণা উপস্থাপন করবে। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে ও সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা ধারাবাহিকভাবে একটি খাতায় প্রকল্প ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করবে।

ফাইল ছবি প্রথম আলো

তথ্য সংগ্রহ

শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সহায়তায় বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক, ইন্টারনেট, পত্রিকা, লাইব্রেরি ইত্যাদি উৎস থেকে ডেঙ্গু রোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে মশা ও মশাবাহিত রোগ, এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ, এ রোগের কারণ ও লক্ষণ, রোগের বিস্তার, রোগ নিরাময় ও প্রতিকার, রোগীর খাবার চার্ট ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

এ প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ধারণা পাবে। এসব তথ্য তারা পরিবারের সদস্য ও অন্যদের জানাবে। পানি জমতে না পারার বিষয়টি লক্ষ রাখা, ফুলের টব বা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা, মশার ডিম অপসারণে পানি জমা পাত্রটি ঘষে পরিষ্কার করা, পাত্র উল্টে রাখা, ছাদবাগানে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি টানিয়ে ঘুমানো ইত্যাদি বিষয়ে নিজ পরিবার ও অন্যদের উৎসাহিত করবে। শিক্ষার্থীদের পোস্টার–প্ল্যাকার্ড তৈরি ও প্রদর্শনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, বিভিন্ন স্থানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, নিজ বাড়িঘর ডেঙ্গুর ঝুঁকিমুক্ত রাখার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্কুলের ভবনের ভেতর ও বাউন্ডারির ভেতরে এবং নিজ বাসাবাড়িতে শিক্ষার্থীদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।

রোব-মঙ্গল-বৃহস্পতিবার শেষ ১৫ মিনিট চলবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম

শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহের রোব, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা শেষ পিরিয়ডের শেষ ১৫ মিনিট পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শেষ ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রতি সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়িতে সুবিধাজনক সময়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাবে। পরিবারের অভিভাবকের নেতৃত্বে ও অন্য সদস্যদের সহায়তা নিয়ে এ কার্যক্রম চালাতে হবে।

ষষ্ঠ ও সপ্তমের মূল্যায়নের অংশ হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক মূল্যায়ন হবে

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালে মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এ প্রকল্পভিত্তিক কাজটি মূল্যায়ন করা হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায়ের (বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ক্লাব) ও সপ্তম শ্রেণির পঞ্চম অধ্যায়ের শিখনকালে মূল্যায়নের অংশ হিসেবে কাজটি মূল্যায়ন করতে হবে। এ ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির আচরণিক সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে সব শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের প্রকল্পভিত্তিক এ কাজের মূল্যায়ন করবেন।

শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ৫০ শতাংশ চূড়ান্ত মূল্যায়নে যোগ

অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এ কার্যক্রম ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতার মূল্যায়ন করবেন। অন্যদিকে অভিভাবকেরা ওই শিক্ষার্থী কেমন ধারণা অর্জন করেছে, সে বিষয়টি মূল্যায়ন করবেন। আলাদা ছকে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা মূল্যায়ন করবেন। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের পূরণ করা মূল্যায়ন ছক শিক্ষককে দেবে। শিক্ষক অভিভাবকের পূরণ করা মূল্যায়ন ছকে নম্বর দিয়ে চূড়ান্ত গ্রেডশিটে স্থানান্তর করবেন। দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একক ও দলগত পারদর্শিতার দিকে লক্ষ রাখবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের সময় শিক্ষার্থী নিজ পরিবারে কতটুকু সচেতনা সৃষ্টি করতে পেরেছে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ৫০ শতাংশ চূড়ান্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নে যোগ করবেন।

শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট আঞ্চলিক পরিচালকেরা নিজ নিজ অঞ্চলের উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারদের সমন্বয়ে আয়োজন করবেন। এ সভায় এ কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানাবেন ও বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। উপজেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজ নিজ উপজেলার প্রধান শিক্ষকদের সমন্বয়ে দ্বিতীয় সভার আয়োজন করবেন এবং সেই সভায় এ কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানাবেন ও কার্যক্রমে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য আঞ্চলিক পরিচালক, উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন ও তদারক করবেন। নির্দেশিকা অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বলেছে অধিদপ্তর।

**মাউশির পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন