নকল মানুষ আসলে একটা কাকতাড়ুয়া

বাংলা: সহপাঠ–কাকতাড়ুয়া

প্রশ্ন

ক. ‘কাকতাড়ুয়া’ গল্পের নকল মানুষ আসলে কী, তার বর্ণনা দাও।

খ. মৃগাঙ্কশেখর মুখোপাধ্যায় চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর–ক

‘কাকতাড়ুয়া’ গল্পের নকল মানুষ আসলে একটা কাকতাড়ুয়া। মাঠের মধ্যে যে জায়গায় শীতের ফসলের খেত ছিল, তারই মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল একটি কাকতাড়ুয়া। খেতের মধ্যে একটা খাড়া বাঁশ মাটিতে পোঁতা। সেই বাঁশের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে একটা বাঁশ ছড়ানো হাতের মতো দুই দিকে বেরিয়ে আছে। এই হাত দুটি গলানো রয়েছে একটা ছেঁড়া জামার দুটি আস্তিনের মধ্য দিয়ে। খাড়া বাঁশটির মাথায় রয়েছে একটা উপুড় করা মাটির হাঁড়ি। হাঁড়িটি কালো রং করা। তার ওপর সাদা রং দিয়ে আঁকা রয়েছে বড় বড় চোখ-মুখ।

পাখিরা এই কাকতাড়ুয়াকে আসল মানুষ ভেবে ভুল করে। ভয়ে আর তারা খেতে বসে ফসল নষ্ট করে না।

উত্তর–খ

মৃগাঙ্কশেখর মুখোপাধ্যায় একজন সাহিত্যিক। লেখক হিসেবে তাঁর বেশ খ্যাতি রয়েছে। তাই দুর্গাপুরে একটি ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মানপত্র দেওয়ার জন্য।

তিনি ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। সহজে কারও ওপর রাগ করেন না। তবে যাত্রাপথে বিপদে পড়ায় তাঁর মেজাজটা একটু খিটখিটে হয়ে যায়।

মৃগাঙ্কশেখর মুখোপাধ্যায় একজন ভালো পাঠকও। তাই রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে তিনি ব্যাগ থেকে একটা গোয়েন্দা কাহিনির বই বের করে পড়তে আরম্ভ করেন। সময় কাটাতে বই পড়তে পছন্দ করেন বলেই যাত্রাপথে নিজ ব্যাগে তিনি বই রাখতে ভোলেননি।

মৃগাঙ্কশেখর চরিত্রে আত্মসমালোচনার গুণটিও প্রকাশ পেয়েছে। বাঙালিদের স্বার্থপরতার কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজের কথাও ভেবেছেন। তিনি মনে করেন, তাঁর খ্যাতি রয়েছে ঠিকই, তবে  মজ্জাগত দোষগুলোর সংস্কার তাঁর মধ্যেও হয়নি। একজন লেখক হওয়ায় প্রকৃতিকে তিনি খুব গভীরভাবে নিরীক্ষণ করেছেন। প্রকৃতির সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর পরিবর্তনও তাঁর নজর এড়ায় না। পানাগড়ের মাঠ, রাস্তা ও দূরের গ্রামগুলোও তিনি লক্ষ করেছেন। লক্ষ করেছেন খেতের মাঝের কাকতাড়ুয়াকেও।

লেখক মৃগাঙ্কশেখর মুখোপাধ্যায় একজন শিক্ষিত ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তাঁর পিতা ওঝার কথা বিশ্বাস করে বিশ বছরের পুরোনো গৃহকর্মীকে চুরির দায়ে কাজ থেকে তাড়িয়ে দেন। কিন্তু এ বিষয়টা হয়তো কোথাও না কোথাও তিনি মানতে পারেননি। ফলে তাঁর সত্যান্বেষী মনে এ ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় ছিল। আর তাই অবচেতন মনেই তিনি সে সত্যটি আবিষ্কার করে ফেলেন।

মৃগাঙ্কশেখর মুখোপাধ্যায় চরিত্রটিকে লেখক একজন শিক্ষিত, সচেতন, শান্ত, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

চেতনে-অবচেতনে তিনি অভিরামের ওপর হওয়া অন্যায়টি মেনে নিতে পারেননি। তাই অবচেতনেই তিনি সত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে গৃহকর্মীর প্রতি তাঁর ভালোবাসারও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমরা তাঁর মানবিক হৃদয়েরও পরিচয় পাই। সর্বতোভাবেই তিনি একজন উন্নত চরিত্রের মানুষ।

  • লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা