প্রথম আলো : প্রাথমক বৃত্তি পরীক্ষার ফল গতকাল দুপুরে ঘোষণা করার কয়েক ঘন্টা পর স্থগিত করা হয়েছে । এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই । বিশেষ করে এর প্রভাব নিয়ে যদি কিছু বলেন।
রাশেদা কে চৌধূরী : প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরু থেকেই ওলট-পালট শুরু হয়েছে। আমি মনে করি এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রভাবটি পড়বে আসলে শিক্ষার্থীদের ওপর। নীতিনির্ধারকেরা যখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন তখন শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে নেন বলে মনে হচ্ছে না। আমি বলব আসলে এই পরীক্ষাটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষাটি নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আপনারা মানে দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক এই বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যদিও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বছরের শেষ সময়ে ঘোষণা দিয়ে এই পরীক্ষা নিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই ।
রাশেদা কে চৌধূরী: বাংলাদেশের শিক্ষাজগতের দিকপাল কয়েকজন, যাঁদের মধ্যে স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো চেয়ারম্যানসহ অনেকেই এই পরীক্ষার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্ত তা গ্রাহ্য না করে এই পরীক্ষাটি নিয়ে এগিয়ে গেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। প্রথমে একটা তারিখ দিল, পরে সেই তারিখও পরিবর্তন করল। এখন কি দেখলাম, পরীক্ষা তো নেওয়া হলো, ঘোষণা দিয়ে ফল প্রকাশ করা হলো। আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই ফল স্থগিতও করা হলো। বলা হচ্ছে কারিগরি ত্রুটির কারণে স্থগিত করা হলো। কিন্তু এই বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে এত তাড়াহুড়োর কি প্রয়োজন ছিল? এটি কোনোভাবেই বৃহত্তর অংশীজনদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
পরীক্ষা ছাড়া কি বৃত্তি দেওয়ার কোনো বিকল্প আছে, যদি থাকে তাহলে সেটি কি হতে পারে?
রাশেদা কে চৌধূরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী মেধাবী। কিন্তু তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে। তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিয়েও কথা বলেছেন এবং বইয়ের বোঝা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু তারপরেও আমরা দেখলাম প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এই বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করল। যেটা করা যেতে পারে সেটা হলো দীর্ঘদিন ধরে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়নি; সেটা বাড়ানো যেতে পারে। নিম্ন আয়ের মানুষদের কথা বিবেচনা করেও এই উপবৃত্তির টাকা বাড়ানো উচিত। আমরা আশা করছি আসন্ন বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে।
ইদানীং শিক্ষার কিছু বিষয়ে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। যেমন চলতি শিক্ষাবর্ষের এক মাস ১০ দিন পর নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি দুটি শ্রেণির দুটি বই বিতর্কের মূখে প্রত্যাহার করা হলো। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি ।
রাশেদা কে চৌধূরী: নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে, সেটা আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তাঁদের কাছে খুবই বিভ্রান্তিকর। মনে হচ্ছে যেন আপসকামীতা, সমঝোতাই এখানে মুখ্য হয়ে গেছে। এটা দেশের জন্য ও অসম্প্রদায়িক চেতনার জন্য কল্যাণকর নয়।