বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় অতিক্রম করতে হয় তিন ধাপ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে পড়াশোনা করছেন পরীক্ষার্থীরাফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রাক্-নির্বাচনী পর্ব আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কমিটি। পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বটি ১৬ মার্চ নেওয়ার সুপারিশ করেছে ভর্তি কমিটি। প্রস্তুতির জন্য সময় আছে আর ৪৫ দিনের মতো। শিক্ষার্থীরা এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধৈর্য, সাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করবেন সাফল্যের মুকুট। সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অনেক সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন না। কীভাবে শেষের দিকে প্রস্তুতি নিতে হবে, ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য সে পরামর্শ নিয়মিত ছাপা শুরু হয়েছে প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায়। শেষ সময়ের প্রস্তুতি ও পরামর্শ নিয়ে আজ ছাপা হচ্ছে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রামিস মুবাশশিরা মৌনতার পরামর্শ।

আরও পড়ুন

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অন্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেয়ে কঠিন

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার থেকে তুলনামূলক কঠিন। এ জন্য ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও রসায়ন—এই তিন বিষয়ে ৯০ শতাংশ নম্বর ওঠাতে পারলে বুয়েট কর্তৃক নির্ধারিত প্রিলিমিনারি, অর্থাৎ প্রাক্‌–নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে। যেখানে মোট ১৮ হাজারের মতো শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। প্রাক্‌–নির্বাচনী পরীক্ষাটি বহুনির্বাচনীপদ্ধতিতে (এমসিকিউ) অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি থেকে মোট ছয় হাজার শিক্ষার্থী নির্বাচিত হন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য।

বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রামিস মুবাশশিরা মৌনতা
ছবি: সংগৃহীত

আমি এইচএসসিতে অধ্যয়নের সময় পরীক্ষার পড়ার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্ন ব্যাংক থেকে ছোট ছোট প্রশ্নের সমাধান করার চেষ্টা করেছি। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও রসায়নের বিভিন্ন লেখকের বই ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান বইয়ের বিকল্প নেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বই আছে, যেমন পদার্থবিজ্ঞানের আমির খান ও তপন স্যারের, গণিতের কেতাবউদ্দিন স্যারের, রসায়নে হাজারী নাগ স্যার ও গুহ স্যারের বইয়ের বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা এবং প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলনী প্রশ্ন এইচএসসি পরীক্ষার পাশাপাশি বহুনির্বাচনী লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত হুবহু এসে থাকে। আমি ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকেই যতটা সম্ভব বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের বই অনুশীলন করেছি। এর ফলে বিভিন্ন গণিতের conceptual অংশ ধরতে সহজ হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ সময় মাথায় রাখতে হয়, যেমন প্রথমটি হলো সেলফ স্টাডি। যিনি যত বেশি তাঁর নিজের পড়ার মধ্যে সময় দেবেন, তাঁর দক্ষতা ও দুর্বলতার টপিকগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন এবং সে অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিংবিষয়ক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এতে নিজের ভুলভ্রান্তি, টাইম ম্যানেজমেন্ট, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কতটা প্রশ্ন উত্তর করতে পারা যাচ্ছে, তার ধারণা লাভ করতে পারবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ম্যাথ সমাধান করার অনুশীলন হয়ে যাবে এবং যে যে প্রশ্নের সমাধান করা যায় না, সেগুলো বাসায় এসে সমাধান করতে হবে। কিন্তু পরীক্ষা খারাপ হলেও হতাশ না হয়ে কোন কোন টপিকে দুর্বলতা আছে, সেটি বের করে সংশোধন করলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো কিছু করা সম্ভব। নিজের পড়া ও বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যে একটা সাম্য বজায় রাখতে হবে।

যেহেতু প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বহুনির্বাচনীপদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ১ ঘণ্টা সময় পাবেন। যতটা সম্ভব নির্ভুলভাবে এমসিকিউ সমাধান করতে হবে, কেননা প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যায়। প্রতিটি বিষয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে এমসিকিউ শর্টকাট নিয়ম থাকে এবং গণিত বিষয়ের বিভিন্ন ম্যাথ ক্যালকুলেটরে (math calculator) সরাসরি করা যায়। এই সময় থেকে এগুলো অনুশীলন করতে হবে। এত করে কম সময়ে যথেষ্ট বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সেটি হলো, প্রিলিমিনারির জন্য লিখিত পড়া অবহেলা করা যাবে না। বরং লিখিত অংশের জন্য পড়লে প্রিলিমিনারির ৭০ শতাংশ অংশ কভার হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

লিখিত পরীক্ষায় ৪০টি প্রশ্ন থাকে। যেখানে গণিত বিষয়ে ১৪টি, পদার্থবিজ্ঞানে ১৩ ও রসায়ন বিষয়ে ১৩টি প্রশ্ন এসে থাকে। লিখিত প্রশ্ন সহজ, মধ্যম ও কঠিন তিন ধরনের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। প্রথম সহজ প্রশ্নগুলো উত্তর করা বুদ্ধিমানের কাজ। এরপর মধ্যম, তারপর কঠিন প্রশ্ন। প্রথমেই কঠিন প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, যিনি যত প্রশ্ন নির্ভুলভাবে উত্তর করতে পারবেন, তাঁর উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। সর্বোপরি পরীক্ষায় যত বেশি নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, তাঁর যেকোনো ধরনের প্রশ্ন সমাধান করা সহজ ও দ্রুত হবে।

  • লেখক: রামিস মুবাশশিরা মৌনতা, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যন্ত্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা করছেন।