‘অটো পাসের’ চেয়ে এই ব্যবস্থা ভালো: অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান

এস এম হাফিজুর রহমান

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে আট মাস পর চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়েছে। ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্নভাবে গ্রুপভিত্তিক তিন বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ পরীক্ষা। পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার হার আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এ পরীক্ষা এবং ফলাফল নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: করোনার সংক্রমণের কারণে এবার ভিন্নভাবে হলো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় পাসের হার এবং ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ অনেক বেড়েছে, কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

এস এম হাফিজুর রহমান: যে ফলাফল হয়েছে, সেটি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, এবার মাত্র তিন বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে, আবার পাঠ্যসূচিও ছিল সংক্ষিপ্ত। ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই সেই পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করতে পেরেছিল, অল্প পড়ায় বেশি মনোযোগের সুযোগ পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল এমন হওয়ারই কথা ছিল।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি আগেই বললেন এবার গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো মৌলিক এবং বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়নি। এ রকম অবস্থায় এবারের এসএসসি পাস শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চমাধ্যমিকে যাবে, তখন কোনো অসুবিধায় পড়বে কি?

এস এম হাফিজুর রহমান: এখানে দুটো দিক আছে। প্রথমত কিছু বিষয় শিক্ষার্থীরা পড়েনি। দ্বিতীয়ত যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোরও সব অধ্যায় পড়েনি। এ অবস্থায় এসব শিক্ষার্থী যখন উচ্চমাধ্যমিকে যাবে, তখন এর দুটোরই প্রভাব পড়বে। কারণ, উচ্চমাধ্যমিকের দক্ষতার বিষয়গুলো আরেকটু উঁচু মানের। কিন্তু এসএসসিতে যেহেতু সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি বা মূল্যায়ন হয়নি, ফলে স্বভাবতই সেই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা পড়েনি বা পড়লেও জোর ছিল না। যার ফলে একটি ঘাটতি থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। এর ফলে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে যোগসূত্র তৈরি করতে বেশ ঝামেলা হবে।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: তাহলে এ ঘাটতি পূরণের পথ কি?

এস এম হাফিজুর রহমান: করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাস্তব কারণেই হয়তো এভাবে পরীক্ষাটি নিতে হয়েছে। কিন্তু এর ফলে ঘাটতি থাকবে এটিও বাস্তবতা। তাই এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই ঘাটতি পূরণের জন্য মহাপরিকল্পনা করে এগোতে হবে। এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কীভাবে হবে তার পরিকল্পনাগুলো এখনই করা উচিত। না হয় শিক্ষার্থীদের সাগরে সাঁতরানোর মতো অবস্থা হবে। ইতিমধ্যে তারা কিছুটা সাগরে পড়ে আছে। তাই ঘাটতি নিয়ে যদি তাদের আরও ওপরের দিকে নেওয়া হয়, তাহলে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে আরও সমস্যায় পড়বে। সুতরাং এখনই ঘাটতি পূরণের জন্য ভবিষ্যতের শিক্ষার সঙ্গে যোগসূত্র করতে ‘ম্যাপ’ করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যৎ ঘাটতি কমবে। এখন পরিকল্পনা না করলে পরে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রতিবারই ফল প্রকাশের পর জিপিএ-৫ নিয়ে একধরনের মাতামাতি দেখা যায়, এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কীভাবে দেখছেন?

এস এম হাফিজুর রহমান: এ বিষয়ে আগেও বলেছি। দেখা গেছে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হতে পারছে না। আবার জিপিএ-৫ না পেয়েও অনেকে খুব ভালো বিষয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। আসলে জিপিএ-৫ নিয়ে এ মাতামাতি সমাজের একটি সমস্যা। এ থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে পারব, ততই আমাদের সবার জন্য মঙ্গল হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এককথায় যদি এবারের ফলাফল মূল্যায়ন করতে বলি, কী বলবেন?

এস এম হাফিজুর রহমান: সার্বিকভাবে বলব, শেষ পর্যন্ত গতবারের এইচএসসি পরীক্ষার মতো ‘অটো পাসের’ ব্যবস্থা না করে অন্তত ন্যূনতম পর্যায়ে হলেও পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নটি হয়েছে। যদিও এ নিয়ে ঘাটতি ছিল। তবু এ ব্যবস্থা অটো পাসের চেয়ে ভালো হয়েছে।