এইচএসসিতে পাস করবেন সব পরীক্ষার্থী, আগ্রহ কে কত জিপিএ পায়

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর আনন্দে ভাসছেন উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা। উল্লাসের একপর্যায়ে এক বন্ধুকে শূন্যে ছুড়লেন সহপাঠীরা
প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত বছরের এপ্রিলে। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এখন পরীক্ষা ছাড়াই ফল মূল্যায়ন করায় সবাই পাস করবেন। তবে সবার আগ্রহ, কে কত জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পায়, তা নিয়ে।

এসএসসি ও জেএসসির পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে এবার। আজ শনিবার ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার্থীর ফলাফল কী হবে সেটি ঠিক হবে তার জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। আর এ পরীক্ষায় পাস করানো হবে সকল শিক্ষার্থীকেই।

এর আগে প্রথম আলোকে গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেছিলেন, ‘অবশ্যই সবাই পাস করবে। তবে ফলটা কী হবে সেটা নির্ভর করছে তার জেএসসি ও এসএসসির পরীক্ষার ফলাফলের ওপর।’

এইচএসসি পরীক্ষায় ফল প্রকাশের পর এভাবে আনন্দ প্রকাশ করেন নটরডেম কলেজের দুই শিক্ষার্থী
ফাইল

গত ৭ অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের এইচএসসি শিক্ষার্থীরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মূল্যায়নের কাজটি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করেছে। বিভাগ পরিবর্তনজনিত (যারা বিজ্ঞান থেকে মানবিক বা অন্য বিভাগ পরিবর্তন করেছে) কারণে যে সমস্যাটি হবে তা ঠিক করতেও বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করেছে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের পরামর্শ বা মতামত দিয়েছে। সেই পরামর্শের ভিত্তিতে এই মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হচ্ছে আজ।

২০২০ সালের ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এভাবে উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ফল সকাল সাড়ে ১০টায়

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার (আজ) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গত বছরের এপ্রিলে। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এখন পরীক্ষা ছাড়াই ফল মূল্যায়ন করায় সবাই পাস করবেন। তবে সবার আগ্রহ, কে কত জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পায়, তা নিয়ে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুভাবে ফল জানা যাবে। প্রথমত যারা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রাক্‌–নিবন্ধন করে রেখেছে, তাদের দেওয়া নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তায় ফল জানানো হবে। এ ছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ফল জানতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই শিক্ষার্থীদের।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি ছাত্রছাত্রী। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির কিছু বেশি। আর কলেজে মোট শিক্ষার্থী প্রায় অর্ধকোটি। বাকি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী
ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষাপঞ্জি ওলটপালট হয়ে গেছে। সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দূরশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও বাস্তবে ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই এই ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেনি বলে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দীর্ঘ এই বন্ধের ফলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলে আসছেন শিক্ষাবিদেরা। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এই চার কোটি শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করে এগোনোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন তাঁরা।