এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতি কীভাবে নেবে

ফাইল ছবি

এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে (সংক্ষিপ্ত সিলেবাস) ভালো ফলাফল করতে চাইলে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে।

পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, দেখতে দেখতে তোমাদেরও পরীক্ষার সময় এগিয়ে এল আর এবারের পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, কীভাবে ভালো ফলাফল করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে হবে, তা নিয়ে তোমাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তাই তোমাদের জন্য আমরা কিছু গাইডলাইন দেব পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্রের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের তত্ত্বীয় অংশের ওপর।

পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র

অধ্যায় ২

ভেক্টর-ভেক্টর অধ্যায়ে যে যে টপিকে যেভাবে প্রস্তুতি নেবে—ভেক্টর অধ্যায়টির আগের বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবে, নদী নৌকা, বৃষ্টি, আপেক্ষিক বেগ নিয়ে অহরহ ম্যাথ এসেছে। এই টপিকগুলো ঠিকঠাক আয়ত্ত করার জন্য দুটি ভেক্টরের লব্ধি ও ভেক্টরের উপাংশ নিয়ে সঠিক ধারণা থাকলেই হবে। নদী নৌকা, বৃষ্টি ও আপেক্ষিক বেগের জন্য বইয়ে থাকা ম্যাথগুলোর পাশাপাশি টেস্ট পেপারগুলো থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন ও কলেজগুলোর প্রশ্ন দেখে রাখলেই পর্যাপ্ত। অবশ্য স্কেলার ও ভেক্টর গুণন এবং এদের প্রয়োগ, যেমন অংশক, অভিক্ষেপ, লম্ব একক ভেক্টর—এগুলো সম্প্রতি এসেছে এবং এগুলো মোটামুটি সবাই পারে, বই থেকে একবার ভালোমতো দেখে রাখলেই হবে, তুমিও পারবে।

অধ্যায়-৪

নিউটনীয় বলবিদ্যা—প্রথমেই বলে দিই, সৃজনশীল অংশে প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতায়- কেন্দ্রমুখী বল, রাস্তার ঢাল (ব্যাংকিং) এবং জড়তার ভ্রামক হতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে। যখন প্রস্তুতি নেবে, এটা মাথায় রেখে এই টপিকগুলোর একটা ম্যাথও বই থেকে মিস করা যাবে না এবং বিগত বোর্ডের প্রশ্নগুলো সমাধান করলেই মোটামুটি অনুশীলন হয়ে যাবে। তবে সব মিলিয়ে জ্ঞান, অনুধাবন ও এমসিকিউতে ভালো করার জন্য সিলেবাসে থাকা টপিকগুলো ভালোভাবেই আয়ত্ত করে ফেলো। বল, জড়তা, ভরবেগ, ঘাত বল, বলের ঘাত, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক এসবের সংজ্ঞা জ্ঞানমূলকের জন্য টপ ফেবারিট। নিউটনের গতি সূত্রের ব্যবহার—ঘোড়ার গাড়ি, নৌকার গুন টানা, বন্দুকের গুলি ছোড়া—এসব থেকে অনুধাবনের পাশাপাশি টুকটাক অংশও আসে। মহাশূন্যে অভিযান (রকেট)সংক্রান্ত ম্যাথ বেশ গুরুত্বপূর্ণ- এমসিকিউতেও আসে।

অধ্যায়-৫

কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা—বিভিন্ন দৃশ্যে কাজ ও শক্তির মান নির্ণয় করা, যেমন: আনত তল বরাবর, একাধিক বস্তুসংক্রান্ত, বিভিন্ন শক্তি নির্ণয়, গতিশক্তি নির্ণয়, ভরকেন্দ্রের সরণ ব্যবহার করতে হয়—এমন অঙ্ক প্রয়োগে অনেক এসেছে। আর উচ্চতর দক্ষতায় যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সংরক্ষণ হয়েছে কি না, এটা বারবার দেখাতে বলেছে। আর কুয়োর পানিসংক্রান্ত অঙ্ক ও পাম্পের ক্ষমতা, এই দুটোও ফেবারিট। বই পড়ার সময় অবশ্যই এ–সংক্রান্ত কোনো ম্যাথ মিস দিয়ো না, তাহলেই হবে। তবে জ্ঞান ও অনুধাবনের জন্য সিলেবাসের বাদবাকি টপিকগুলো ভালোমতো বই থেকে পড়ে নিলেই হচ্ছে। এসব এভাবে পড়ে নিলে এমসিকিউও কভার হয়ে যাবে বেশ ভালোমতোই।

ফাইল ছবি

অধ্যায়-৮:

পর্যাবৃত্ত গতি—এই চ্যাপ্টারের প্রশ্নগুলো সলভ করতে তুলনামূলক কম সময় দরকার হয়, তাই পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনায় এই চ্যাপ্টার থেকে প্রশ্ন সমাধান করা বেশ সুবিধার। সাম্প্রতিক বছরে সরল দোলক ও স্প্রিং থেকেই প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন এসেছে। বই ও টেস্ট পেপার সমাধান করলে এই টপিকের ম্যাথগুলো একদম সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে দোলনকাল, সময় হারানো এসব নিয়ে হালকা সাবধানতা বজায় রাখতে হবে। আর জ্ঞানমূলক এবং অনুধাবনের জন্য এসবের পাশাপাশি পর্যাবৃত্ত, পর্যাবৃত্ত গতি, সরল ছন্দিত স্পন্দন এবং এর বৈশিষ্ট্য—এসব বই থেকে বুঝে বুঝে পড়ে নিলেই হচ্ছে। আশা করি তোমরাও এই চ্যাপ্টার থেকে সহজেই প্রশ্ন সমাধান করতে পারবে।

অধ্যায়-১০

আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব—এই চ্যাপ্টার তুলনামূলক বেশ শর্ট। আদর্শ গ্যাসের সূত্র ও সমীকরণ, যেমন: বয়েল, চার্লসের সূত্র, PV=nRT এ–সংক্রান্ত ম্যাথ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর হট ফেবারিট টপিক—আর্দ্রতা, শিশিরাঙ্ক তো আছেই। শুধু এই কয়েকটি টপিক, এর ম্যাথ এবং বিগত বছরে আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করে রাখলে তুমি নিজেও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। তবে জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলকের জন্য বইয়ের Reading বিকল্প নেই। এমসিকিউ ও এসব টপিক থেকে অনায়াসে পারবে।

পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র

অধ্যায়-১: তাপগতিবিদ্যা—
এই অধ্যায়টি থেকে ফুল সিলেবাসের প্রশ্নেও ১টি করে সৃজনশীল আসতই। কেননা বইতে তাপ নিয়ে কেবল এই অধ্যায়টিই একমাত্র। এই অধ্যায়ের গুরুত্বটা তাই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আরও বেড়ে গেল। ধারণা করা যায় ২টি সৃজনশীল পেতে পারো অধ্যায়টি থেকে। এই অধ্যায়ের টপিকগুলোর মধ্যে দ্বি-স্থির বিন্দু নীতি, তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র, এন্ট্রপি তাপ ইঞ্জিন, কার্নো ইঞ্জিন, কর্মদক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এবার কিন্তু তোমাদের এক স্থির বিন্দু নীতি, তাপীয় রাশিমালা, অভ্যন্তরীণ শক্তি, আপেক্ষিক তাপ, রেফ্রিজারেটরও ভালো করে ঝালিয়ে নিতে হবে। ভালো প্রস্তুতি নিলে এই চ্যাপ্টারে নম্বর কাটা যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই এই অধ্যায়কে টপ প্রায়োরিটিতে রাখবে। এমসিকিউএর জন্য ত্রুটিপূর্ণ থার্মোমিটার, বিভিন্ন স্কেলের সম্পর্ক, এন্ট্রপির পরিবর্তন, কৃতকাজ বের করা, কার্নো ইঞ্জিনের সমস্যা আর সামগ্রিক বেসিক অংশ ভালো করে জানতে হবে৷

অধ্যায়-৩

চল তড়িৎ: স্থির তড়িৎ নেই, কেবল চল তড়িৎ আছে, তার মানে বোঝাই যাচ্ছে এটি থেকে এবার ২টি সৃজনশীল হতে পারে। এই অধ্যায়ে বেশি বেশি ম্যাথ প্রবলেম, সার্কিট সলভ করবে, কেননা নিয়ম একই হলেও ভিন্ন ভিন্ন সার্কিট সলভের অভ্যাস না থাকলে পরীক্ষার হলে মেলানো যায় না। জুলের তাপীয় ক্রিয়া, রোধের নির্ভরতা, তুল্য রোধ, কারেন্ট বিভক্তিকরণ সূত্র, ভোল্টেজ বিভক্তিকরণ সূত্র, কার্শফের সূত্র, হুইটস্টোন ব্রিজ, মিটার ব্রিজ, শান্ট এগুলোতে যত ধরনের ম্যাথ আসা সম্ভব, তা পরিষ্কার ধারণা থাকলে এই অধ্যায়ে খুব কম সময়েই উত্তর করতে পারবে।

অধ্যায় ৭

ভৌত আলোকবিজ্ঞান—এই অধ্যায়টিতে অপবর্তন, সমাবর্তন অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই ইয়ং–এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ভালো করতে চাইলে ইয়ং–এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার আদ্যোপান্ত সমস্যাগুলো ভালো করে করতে হবে। আর শুরুতে তরঙ্গ মুখ নিয়ে আলোচনা, হাইগেনের নীতিসহ বাকি আলোচনাগুলো জ্ঞানমূলক আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নে প্রায়ই এসে থাকে।

অধ্যায় ৮

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান—আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অধ্যায়টিতে এখন গ্যালিলিও রূপান্তর, লরেন্টজ রূপান্তর থেকেও সমস্যা আসতে পারে, কেননা কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ, ফটোইলেকট্রিক ক্রিয়া, কম্পটন ক্রিয়া, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি, ডি-ব্রগলির সমীকরণ বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই অধ্যায় থেকে বছর বছর আসা হট টপিক দৈর্ঘ্য সংকোচন, সময় সম্প্রসারণ, ভর বৃদ্ধি, ভর শক্তি সম্পর্ক এই টপিকগুলো আরও জোর পাবে।

ছবি: সংগৃহীত

অধ্যায় ১০

সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস—এই অধ্যায়টিতে বাদ যায়নি তেমন কিছুই, গুরুত্বপূর্ণ কী তা যদি বলতে হয়, তবে ডায়োড, ডায়োডের বায়াসিং, একমুখীকরণ, ট্রানজিস্টর, সুইচ ও এমপ্লিফায়ার হিসেবে ট্রানজিস্টর, ডিজিটাল সংকেত, বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা এগুলো গুরুত্ব পাবে। বাইনারি অপারেশন, বাইনারি-হেক্সাডেসিমাল-অক্টাল রূপান্তর এমসিকিউয়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷

আশা করি, শর্ট সিলেবাসের এই টপিকগুলো ভালো করে আয়ত্ত করলে, সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দিলে, ভালো ফলাফল করতে বেগ পেতে হবে না। সবার জন্য জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য শুভকামনা থাকবে।

এ বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে হতে পারে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা, কিন্তু শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখনো প্রস্তুত নন পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার্থী হিসেবে তৈরি হতে হলে সিলেবাসের ওপর ভালো দখল ছাড়াও দরকার সমস্যা সমাধান ও অনেক অনুশীলন। পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হয় সাজেশনভিত্তিক কঠোর চর্চার। অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে তোমরা কম সময়েই সম্পূর্ণ সিলেবাসের রিভিশন নিতে পারো: https://10minuteschool.com/special/hsc-crash-course-2021?aff=affport100

এ কোর্সে অত্যন্ত দক্ষ শিক্ষকেরা প্রায় ৩০০–এর অধিক লাইভ ক্লাস নেবেন, একদম পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট নেবেন (CQ, MCQ সহ)। প্রতিটি পরীক্ষায় সলভ ক্লাস, সলভ শিট ছাড়াও মোট লেকচার শিট পাবে ৩০০–এর অধিক। আবার গণমাধ্যমে যেহেতু শোনা যাচ্ছে যে সিলেবাস কমাতে পারে, তাই আমাদের রুটিনটা আমরা অভিনব রেখেছি, যেন যেদিনই শর্ট সিলেবাসের নোটিশ আসবে, সেদিনই আমরা আমাদের রুটিনটা নতুন সিলেবাসের আদলে তৈরি করে ফেলব, যেন পরীক্ষার্থীদের একটা দিনও সময় নষ্ট না হয়, আর স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সম্ভব হয়, সেই নিশ্চয়তা আমাদের কোর্সে থাকবে। এইচএসসি ক্রাশ কোর্সের উদ্দেশ্যই হলো যেন, তোমাদের মধ্যকার এখনকার অস্থিরতা কাটিয়ে অবশিষ্ট সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয়।

লেখক: নুমেরি সাত্তার অপার, পুরকৌশল বিভাগ এবং চিন্ময় সাহা, তড়িৎকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)