পরীক্ষার মাঝে প্রসবব্যথা, সন্তান জন্ম দিলেন সুপারমম ব্রিয়ান্না
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর আইনের ছাত্রী ব্রিয়ান্না হিলস। আইনের পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন। প্রথম দিনের পরীক্ষার পরই হাসপাতালে গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন। পরদিনের পরীক্ষাও হাসপাতালে দেন ২৮ বছরের ব্রিয়ান্না।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকায় আইনজীবীর পরীক্ষা (বার এক্সাম) পাস করা অনেক কষ্টের। সেই কষ্টকে অন্য মাত্রায় নিয়ে আলোচনায় এসেছেন ব্রিয়ান্না হিলস। নেটিজেনরা তাঁর লড়াইয়ের কাহিনিকে শুভকামনা জানিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে কথার প্রমাণ ব্রিয়ান্না হিলস।
শিকাগোর ল’ স্কুল লয়োলা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ব্রিয়ান্না। তাঁর এ পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুলাই মাসে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি করোনা সংক্রমণের ফলে এ পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। ৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে শুরু হয় আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষা। জুলাই মাসেই গর্ভবতী ছিলেন ব্রিয়ান্না হিলস। তিনি জানতেন, এ সময় তাঁর গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস চলবে। তা সত্ত্বেও পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু পরীক্ষার দিনই প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। এরপরই বাড়ির লোককে ফোন করেন ব্রিয়ান্না। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতেও শেষ করেন নিজের পরীক্ষা। এরপর হাসপাতালে একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরের দিনের পরীক্ষাটিও হাসপাতালের একটি ঘরে বসে দেন।
তাঁর এই কাহিনি জানাজানি হয় মার্কিন এক সিনেটর টুইটারে টুইট করার পরই। ঘটনা সামনে আসতেই নেটিজেনদের অনেকেই ব্রিয়ান্নাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ আবার পুত্রসন্তানের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে ‘সুপার মম’ও বলেছেন।
ব্রিয়ান্না হিলস বলেন, ‘ভেবেছিলাম পরীক্ষার সময় ২৮ সপ্তাহের গর্ভবতী থাকব, কিন্তু মহামারির কারণে পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে যায়। তখন ৩৮ সপ্তাহ চলে। পরে হাসপাতালে থেকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বারের অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষা চার ভাগে (সেকশন) হয়। এর একটির নাম রিমোট ভার্সন। এই ধাপের পরীক্ষা দুই দিনে হয়। পরীক্ষার সময়টুকু কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়। হিল প্রথম দিনের পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু পরীক্ষার টেবিল থেকে উঠতে চাননি। ততক্ষণে রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। পরে কোনোভাবে নিজেকে পরিষ্কার করে আবার টেবিলে বসে পড়েন পরীক্ষার জন্য।
ব্রিয়ান্না হিলস বলেন, ‘স্বামীকে ডাক দিয়ে কান্না শুরু করেছিলাম। ধাত্রী এবং মা-ও আসেন। এরপর দ্বিতীয় পার্টের পরীক্ষায় বসে যাই। কারণ আমার ধাত্রী বলছিলেন হাসপাতালে যাওয়ার আরও সময় আছে।’ প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষ করে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রাত ১০টার দিকে। তিনি জানান, ‘পুরোটা সময় আমি এবং আমার স্বামী ভেবেছি কীভাবে পরীক্ষা শেষ করা যায়। আমার মনে অন্য কোনো উপায় ছিল না।’ পরের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিলসের জন্য একটি কক্ষ খালি করে দেয়। দরজায় লিখে দেওয়া হয় ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব’। হিলস সেখানে বসে পরীক্ষা দেন। বিরতির সময় ছেলেকে খাওয়ান।
এভাবে পরীক্ষা দিতে পারায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হিলস বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। ধাত্রী আর নার্সদের এমন সাহায্য না পেলে আমি মা হতে পারতাম না।
পারতাম না আইনজীবী হতে।’ তিনি এখনো রেজাল্ট পাননি। কিন্তু তার আগেই একটি প্রতিষ্ঠান তাঁকে চাকরি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এর আগে গত মাসে সদ্য মা হওয়া মার্কিন জনপ্রতিনিধি শিশুকে কোলে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তিনি প্রক্সি ভোটের আবেদন করলেও তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত দুধের শিশুকে নিয়েই ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সূত্র: সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস