ভারতে করোনায় বাতিল দশম শ্রেণির পরীক্ষা, স্থগিত দ্বাদশও

ভারতে করোনায় বাতিল দশম শ্রেণির পরীক্ষা, স্থগিত দ্বাদশও
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে দেশজুড়ে বেড়েছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। দেশটির ১১ রাজ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। আর সেই কারণেই আজ বুধবার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সিবিএসই) এ বছরের দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেছে। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা আপাতত স্থগিত।

আজ বুধবার সকালে (গত ২৪ ঘণ্টায়) ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭২ জনের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৭ জনের। এটি এক দিনের সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।

দেশে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া বা বাতিলের দাবি করেছিলেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বৈঠকে পরীক্ষা বাতিল ও স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর জানানো হয়, দশম শ্রেণির পরীক্ষার ফল বোর্ডের তৈরি নীতিমালা ও মাপকাঠি অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। আর করোনা পরিস্থিতি কেমন থাকে, তা দেখে পরে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা কবে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভারতের শিক্ষা বোর্ড আগামী ১ জুন করোনা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করবে।

আগামী ৪ মে থেকে দুই শ্রেণিরই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর ১৪ জুন পর্যন্ত এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রাম নরেশ পোখরিয়াল বলেন, পর্যালোচনার পরই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে ওঠার ব্যবস্থা হবে।

এর আগে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সিবিএসইর এ বছরের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবি ওঠে। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সিবিএসইর বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সিবিএসই) পরীক্ষা বাতিলের আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পরীক্ষায় অংশ নেবে প্রায় ছয় লাখ পড়ুয়া এবং সেই সঙ্গে এক লাখ শিক্ষকও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন। ফলে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো কোভিড-১৯ হটস্পট (সংক্রমণপ্রবণ) হয়ে উঠতে পারে। তাই সিবিএসইকে বোর্ড পরীক্ষা না নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে দ্বাদশ ও দশমের লাখো শিক্ষার্থী অনলাইন পিটিশনে এ বছরের বোর্ড পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ কয়েকজন অভিনয়শিল্পীও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের এ আবেদনে সম্মতি ছিল শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও। গত রোববার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়ালকে চিঠি লিখে পরীক্ষা বাতিলের আবেদন করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন নিয়ে এভাবে ঝুঁকি না নেওয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘রোজ এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমাদের কর্তব্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা। দয়া করে সেটা করুন। পরিস্থিতি চিন্তা করে পরীক্ষা বাতিল করুন।’

তবে চলতি মাসের গোড়ার দিকেই সরকারের পক্ষ থেকে সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। তখন জানানো হয়েছিল, কোভিড-১৯ বিধি মেনেই হবে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবার পরীক্ষা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল ভারত। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু