মাঝপথে আটকাল পরীক্ষা, চাকরিতেও পিছিয়ে

  • বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থী ২৯ লাখ ৮ হাজার ১১ জন। এর মধ্যে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে শিক্ষার্থী ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০।

  • স্নাতকোত্তরে পরীক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৮৯ হাজার।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়েন ছাত্রীটি। কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় ফোন করে জানালেন, তাঁর স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছিল। আটটি তত্ত্বীয় পরীক্ষার মধ্যে গত মার্চে করোনা বন্ধের আগপর্যন্ত পাঁচটি পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি তিনটি পরীক্ষা আটকে যায়। ফলে কয়েক দিন আগে জারি হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না তিনি। অথচ গত মার্চেই তাঁর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেটি হলে ফল প্রকাশ শেষে তিনি এখন প্রাথমিকের এই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতেন।

আক্ষেপ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রী বলেন, তাঁর ইচ্ছা শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু এখন পিছিয়ে যাচ্ছেন। আবার কবে এই সুযোগ আসবে, তা–ও অনিশ্চিত। এ জন্য তাঁর চাওয়া, ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত পাঁচটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ফল দেওয়া কিংবা অন্য কোনো উপায়ে হলেও চাকরির যেসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হচ্ছে, সেগুলোতে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।

করোনার কারণে স্নাতকের (সম্মান) সোয়া দুই লাখ শিক্ষার্থীর পাঁচটি পরীক্ষা হলেও আটকে আছে আরও তিনটি। সেশনজট বাড়ছে।

শুধু এই ছাত্রীই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ২ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী এখন একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা সবাই স্নাতকের (সম্মান) চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষার্থী। মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় চাকরি পাওয়ার চেষ্টায় পিছিয়ে পড়ছেন। একে তো পিছিয়ে পড়ছেন, অন্যদিকে সেশনজটে পড়ে বয়সও বাড়ছে। ফলে যত দিন গড়াচ্ছে চাকরি পাওয়ার চেষ্টার সময়ও তাঁদের কমে আসছে।

এ অবস্থায় তাঁদের খুব একটা আশার কথা শোনাতে পারছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় ‘অটো প্রমোশনের’ সুযোগ নেই।

এভাবে সনদ দিলে তা শিক্ষার্থীদেরও খুব একটা কাজে আসবে না। এ জন্য তাঁরা এখন দুটি বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছেন। একটি হলো যেহেতু পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নেওয়াই আছে, সে ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরপর অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো দ্রুত শেষ করা। আরেকটি হলো যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, সে জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া। এ জন্য এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে প্রফেশনাল কোর্সের যে পরীক্ষাটি বাকি আছে, সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুনাজ আহমেদের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যার ব্যবহার করে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি সফল হলে অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়া হবে।

একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের সেশনজট ছিল। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট কমানোর লক্ষ্যে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেয়। এর মাধ্যমে কলেজগুলোতে ক্লাস কম হলেও ঘন ঘন পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আবারও প্রায় এক বছরের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থী ২৯ লাখ ৮ হাজার ১১ জন। এর মধ্যে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০।

অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন স্নাতকের (সম্মান) চূড়ান্ত পর্বের সোয়া দুই লাখ পরীক্ষার্থী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দপ্তর থেকে জানা গেছে, মোট ৩১টি বিষয়ে স্নাতকের (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১৭ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে। চূড়ান্ত পর্বে মোট আটটি তত্ত্বীয় পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে মোটাদাগে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা করোনা বন্ধের আগেই শেষ হয়েছিল। বাকি পরীক্ষাগুলো এখন কবে নেওয়া যাবে, সেটি অনিশ্চিত।

এ ছাড়া স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এই দুটি পরীক্ষাও শুরুর আগেই আটকে গেছে। এর মধ্যে স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার এবং ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৮৯ হাজার জন।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৮ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঘোষিত পরীক্ষাগুলো আটকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোও পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে আবারও সেশনজট বাড়বে।