স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালকের

বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় স্কুলগুলো খোলা রাখতে প্রচেষ্টাই বাদ দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করছেন জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর
ছবি: ইউনিসেফ

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, ‘আমরা করোনার দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছি। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, তাই স্কুলগুলো খোলা রাখতে বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিতে কোনো প্রচেষ্টাই বাদ দেওয়া উচিত হবে না।’ গতকাল মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউনিসেফপ্রধান জানান, শিশুদের ওপর স্কুল বন্ধের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে অভূতপূর্ব প্রমাণ এবং স্কুলগুলো মহামারির চালিকা শক্তি নয় বলে জোরালো নজির থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই স্কুলগুলো বন্ধ রেখেছে, তা–ও প্রায় এক বছর ধরে। মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেখানে স্কুলগামী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে স্কুলগুলো বন্ধ রাখায় তা বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।

হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ বৃদ্ধি পেতে চলেছে। এটি এমন মাত্রায় বাড়ছে যা আমরা গত অনেক বছরেও দেখিনি। অথচ এটি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কঠোর লড়াই করেছি। শিশুদের পড়া, লেখা ও প্রাথমিক গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনে যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা হ্রাস পেয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য, বিকাশ, নিরাপত্তা এবং সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের ওপর দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ হবে সর্বাধিক।’

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্কুলকেন্দ্রিক খাবারের অভাবে শিশুরা ক্ষুধার্তই থেকে যাচ্ছে এবং এতে তাদের পুষ্টিগত অবস্থা খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে প্রতিদিনের যোগাযোগের অভাব এবং চলাফেরা কমে যাওয়ায় তারা শারীরিক সুস্থতা হারাচ্ছে এবং তাদের মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

স্কুলগুলো প্রায়ই যে সুরক্ষা জাল নিশ্চিত করে তা না থাকলে তারা নির্যাতন, শিশুবিয়ে ও শিশুশ্রমের শিকার হওয়ার আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। এ কারণেই অন্য সব বিকল্প বিবেচনা করার পরই সর্বশেষ উপায় হিসেবে স্কুলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

হেনরিয়েটা ফোর বলেন, স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ঝুঁকি নিরূপণ করা মূল নির্ধারক হওয়া উচিত। যখনই সম্ভব দেশজুড়ে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিহার করা উচিত। যেসব স্থানে উচ্চ মাত্রায় কমিউনিটি সংক্রমণ রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম চাপের মধ্যে রয়েছে এবং যেখানে স্কুল বন্ধ রাখা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, সেসব স্থানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই সুরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে যেসব শিশু তাদের বাড়িতে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে, যারা স্কুল টিফিন বা আহারের ওপর নির্ভরশীল এবং যাদের বাবা-মাকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়, তাদের শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা।

লকডাউনের ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে শুরু করার পর প্রথমেই যে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেবে, তার মধ্যে অবশ্যই স্কুল থাকা উচিত। দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারা শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য ঘাটতি পূরণে বাড়তি ক্লাস নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যদি আরও এক বছর শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে প্রজন্মান্তরে তার ফল ভোগ করতে হবে।