বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ আশরাফুল, গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল কাদের, হেড অব স্কুল আবদুল্লাহ্ জামানসহ অন্য পরিচালকেরাছবি: গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

‘স্কুলে থাকতে অনেক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু কোনো পুরস্কার জিতিনি। এটা নিয়ে আমার সঙ্গে সহপাঠীরা নানা খুনসুটি করত। পরে আমি যখন জাতীয় দলের ক্রিকেটার বনে গেলাম, তারা আবার আমাকে নিয়ে ঠিকই গর্ব করেছে।’

বলছিলেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্রীড়া কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল।

শারীরিক শক্তি ও কৌশলের মোরগ-লড়াই প্রতিযোগিতায় ছাত্রদের অংশগ্রহণ
ছবি: গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৪–২৫’। দিনব্যাপী আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ আশরাফুল। দিনটি ছিল শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আনন্দ–উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ।

‘কমিটমেন্ট–কারেজ–সাকসেস’ স্লোগানে আয়োজিত তৃতীয় ‘অ্যানুয়াল স্পোর্টস ডে’তে অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানটির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী। ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে অংশ নিয়ে মেতেছিল নিজেদের ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখানোর উৎসবে।

জমকালো উদ্বোধন

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় এ আয়োজনের। বিভিন্ন রঙের বেলুন, ফেস্টুন, ব্যানার আর শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পরনে নির্দিষ্ট ‘স্পোর্টস ড্রেসে’ মাঠ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে বর্ণিল ও জমজমাট। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ আশরাফুল। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল কাদের, হেড অব স্কুল আবদুল্লাহ্ জামানসহ অন্য পরিচালকেরা।

এ সময় হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘ঢাকায় এখন সেভাবে মাঠে খেলার কোনো সুযোগ নেই। গাইডেন্স স্কুলের বার্ষিক এমন উদ্যোগ শিশুদের সেই অভাবকে কিছুটা লাঘব করে। তবে এটি বছরে মাত্র এক দিন নয়, অভিভাবকদের উচিত সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সন্তানদের নিয়মিত খেলার জন্য উৎসাহ দেওয়া।’

মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘এক বছর ধরে গাইডেন্সের সঙ্গে কাজ করছি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে। গাইডেন্সের শিক্ষার্থীরা খুব প্রতিভাবান। পড়াশোনার ফাঁকে স্বল্প সময়েও তাঁরা ক্রীড়া–দক্ষতা অর্জনে যে মনোযোগ দেখায়, নিঃসন্দেহে এটি আমাকে আন্দোলিত করে। খেলাধুলার প্রতি গাইডেন্সের এমন গুরুত্ব প্রদান সত্যি প্রশংসনীয়।’

গণিত-দৌড় প্রতিযোগিতায় ছাত্রীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ
ছবি: গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

প্রফুল্লতায় সরব ছিল মাঠ

এদিন মোট ১০৩টি ইভেন্টে অংশ নেয় গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ছিল ৬০, ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়, বিস্কুট দৌড়, ঝুড়িতে বল সংগ্রহ, বেলুন ফাটানো দৌড়, ব্যাঙ–দৌড়, মোরগ–লড়াই, বল সংগ্রহ দৌড়, হাঁড়িভাঙা, ভারসাম্য দৌড়, বল নিক্ষেপ, গণিত–দৌড় ইত্যাদি। পাঁচটি জোনে ভাগ করে ৩৪টি গ্রুপে খেলা পরিচালিত হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি করে খেলায় অংশগ্রহণ করতে হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম এবং খাদিজা জয়নাল আবেদিনের ধারাভাষ্যে প্রতিযোগিতা–পর্ব হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। উৎসবের আমেজ ছিল অভিভাবক গ্যালারিতেও। তাঁদের একজন ঢাকার নিকেতনের বাসিন্দা মারুফ রেহমান। তিনি পেশায় একজন নাট্যকার ও নির্মাতা। তাঁর ছেলে আমান ওসমান কেজি ওয়ানের শিক্ষার্থী। দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতেছে পুরস্কার। মারুফ রেহমান বলেন, ‘পেশাগত কারণে কমবেশি নানা ধরনের স্পোর্টস ইভেন্টে যাওয়া হয়। তবে এই আয়োজনটি যেমন বর্ণাঢ্য, তেমনি সুশৃঙ্খল। নিজের সন্তানের জন্য এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাছাই করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ওরা
ছবি: গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত সামিয়া শামীমও। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে পড়ছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তিন সন্তানের প্রত্যেকেই জিতেছে দুটি করে পুরস্কার। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সামিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা বছরের এ দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। পরস্পরের সঙ্গে পুরস্কার জেতার আনন্দ ভাগাভাগির দৃশ্যটি আমাকে আবেগাপ্লুত করে।’

আয়োজনের সার্বিক দিক নিয়ে গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অব স্কুল আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘যেকোনো সফলতা অর্জনের জন্য দরকার সাহস ও সংকল্প। এ বার্তাটিকে সামনে রেখেই এবার গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। কারণ, খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনের প্রশান্তি না থাকলে পড়াশোনায় মন বসবে না। তাই মাঠকেন্দ্রিক খেলাধুলা যেমন ব্যক্তিগত অধ্যয়নে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি মাত্রাতিরিক্ত গেজেট–আসক্তি থেকেও দূরে রাখে। ভবিষ্যতে স্পোর্টসকে কারিকুলামে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

দিনব্যাপী আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন স্কুলটির শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ফেসবুক পেজ এবং প্রথম আলো ডটকম থেকে আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস
ছবি: গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

পদক পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিজয়ীরা

প্রতিটি ইভেন্টের বিজয়ীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রদর্শিত হচ্ছিল মাঠের এক কোনায় থাকা বড় পর্দায়। দুটি উইনার বুথ থেকে দেওয়া হয় পুরস্কার। ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ৩০৯টি পদকের জন্য লড়াই করে। পুরো আয়োজন তদারকি করার পাশাপাশি বিজয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেন স্কুলটির মিডল সেকশনের কো–অর্ডিনেটর সায়মা রহমান, জুনিয়র সেকশনের কো–অর্ডিনেটর তসলিমা সামাদ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর উম্মে হিকমা নুজুম।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উপাধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) মো. আলাওল কবির। অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে গাইডেন্সের শিক্ষার্থীদের জন্য স্পোর্টসের দুটি ক্লাস থাকে। সারা বছরের প্রস্তুতি শেষে এ দিনে এসে তাঁদের ফাইনাল ইভেন্ট হয়। এ জন্য শিক্ষার্থীরা দিনটি নিয়ে উদ্‌গ্রীব থাকে। এমন একটি স্কুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি ধন্য।’

১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল দ্বিতীয় হওয়া সাহেব আল যুবায়ের রাইফ। তাদের সঙ্গে ছিল বল নিক্ষেপে প্রথম হওয়া মোহাম্মদ সাদ বিন আহসানও। আর রাইয়ান রইস রামিন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জেতে দুটি পুরস্কার। সবাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছিল তারা। আনন্দিত কণ্ঠে রাইয়ান বলল, ‘বল নিক্ষেপ এবং ১০০ মিটার দৌড়ে আমি যথাক্রমে ২য় ও ৩য় হয়েছি। খুব ভালো লাগছে।’

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী যায়নাব বিনতে কারিমের উচ্ছ্বাস ছিল একটু বেশি। কারণ, সে প্রথমবারের মতো কোনো খেলায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছে। গণিত দৌড় এবং ৬০ মিটার দৌড়—দুটোতেই প্রথম হয়ে আনন্দিত যায়নাব বলল, ‘প্রথমে একটু ভয় লেগেছিল। জেতার পর সাহস বেড়েছে। এখন থেকে নিয়মিত বিভিন্ন খেলায় অংশ নিতে চাই।’