আড্ডায় সেরাদের সেরারা

বাঁ থেকে জুনাইদ রাফি, এস এম এ নাহিয়ান, তাহজিব হোসাইন খান ও আবির নোমান

জাতীয় পর্যায়ের গণিত উৎসবের মতো বিশাল মহাযজ্ঞ যদি পুরোপুরি অনলাইনে আয়োজন করা যায়; ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একটা ছোটখাটো আড্ডা তো আমরা আয়োজন করতেই পারি। ৫ মে গুগল মিটে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো এ বছর জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে ‘সেরাদের সেরা’ খেতাব পাওয়া চার শিক্ষার্থী—প্রাইমারি বিভাগে ঢাকার ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী আবির নোমান, জুনিয়র বিভাগে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী জুনাইদ রাফি, সেকেন্ডারি বিভাগে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এস এম এ নাহিয়ান এবং হায়ার সেকেন্ডারি বিভাগে ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী তাহজিব হোসাইন খান।

অনলাইনে আয়োজিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২১ শেষ হয়েছে গত ২০ এপ্রিল। গত ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল নিবন্ধন। বাছাই ও আঞ্চলিক পর্ব শেষে ১ হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। জাতীয় পর্বে বিজয়ী হয় ৮৯ জন। প্রতিটি বিভাগ থেকে একজনকে সেরাদের সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

২০২১ সালটা অনেকের জন্য দুর্ভাবনা ও অনিশ্চয়তার বছর হলেও আবির নোমান নিশ্চয়ই সালটিকে বিশেষভাবে মনে রাখবে। ২০১৯ ও ২০২০ সাল—পরপর দুই বছর জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নিয়ে আঞ্চলিক পর্বেই বাদ পড়েছিল সে। কিন্তু এ বছর পৌঁছে গেছে সেরাদের সেরার মঞ্চে। আগের বছরের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর সফলতা পেয়েছে জুনাইদ রাফিও। এস এম এ নাহিয়ান ও তাহজিব হোসাইন খান অবশ্য শুধু বয়সে নয়, গণিত অলিম্পিয়াডের ময়দানেও বাকি দুজনের চেয়ে ‘সিনিয়র’। দুজনই এর আগে ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের দলে জায়গা করে নিতে পারেনি।

চারজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় গণিতের প্রতি তাদের ভালোবাসা টের পাওয়া যায়। খুদে গণিতপ্রেমীদের ভাবনার জগতের অনেকখানি জুড়েই গণিতের সমীকরণের আনাগোনা। নোমান এখন থেকেই গণিতের বিভিন্ন বই পড়ে। দেশ–বিদেশের গণিত জগতের খোঁজ রাখতে চেষ্টা করে। স্কুলের পড়াশোনা, অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির পাশাপাশি বাসার সামনে ফুটবল-ক্রিকেট খেলে কাটে তার সময়। প্রিয় দলের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম তার কাছে। ঝটপট উত্তর এল, ‘ক্রিকেটে বাংলাদেশ আর ফুটবলে আর্জেন্টিনা।’ ফুটবল খেলতে ভালোবাসে তাহজিবও। মাঠের খেলা আর গণিতের খেলার পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়ের বই পড়ে সময় কাটে তার।

রাফি অবশ্য মাঠেঘাটে ছুটতে খুব একটা পছন্দ করে না। নানা রকম গণিতের সমস্যা সমাধান, বিজ্ঞানের জানা অজানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে দিন কাটে ওর। দাবা বোর্ডেও বেশ ভালো দখল আছে রাফির। প্রিয় লেখক আনিসুল হকের বেশির ভাগ বই সে পড়েছে। বিজ্ঞানচিন্তাসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী আছে রাফির প্রিয় পাঠ্যের তালিকায়।

অন্যদিকে নাহিয়ান ঝুঁকেছে প্রোগ্রামিংয়ে। গণিতচর্চা, ক্লাসের পড়া, এসবের ফাঁকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের কাজ শিখছে সে। এনএইচসিপিসি, কোডফোর্সসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রোগ্রামিং চর্চা করে এখন সময় কাটছে।

আগামী দিনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সবাই এক বাক্যে বলে, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে সেরাদের কাতারে তুলে ধরতে চাই।’ নোমান আরও স্পষ্ট করে বলল, ‘গণিত অলিম্পিয়াডে নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য স্বর্ণপদক অর্জন করতে চাই।’

আর?

অনেক ভেবে নোমান উত্তর দিল, ‘প্রকৌশলী হতে চাই।’ রাফির পরিকল্পনা আছে গবেষক হওয়ার। বড় হয়ে বিজ্ঞান গবেষণায় কাজ করতে চায় সে। অন্যদিকে নাহিয়ান ঠিক করে ফেলেছ কম্পিউটার প্রকৌশলী হবে। তাহজিবও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চায় প্রকৌশল নিয়ে। গণিত নিয়ে বিপুল আগ্রহী এই শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জয় দেখতে চায়। তাই প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে অনলাইনে শেষ হয়েছে জাতীয় গণিত ক্যাম্প এবং আইএমওর জন্য দল নির্বাচনী পরীক্ষা। জাতীয় ক্যাম্প ও দল নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৬ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হবে, যারা চলতি বছর রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ৬২তম আইএমও–তে অংশ নিবে।

ডাচ–বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ১৯তম বারের মতো বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করেছে।