কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণানির্ভর: উপাচার্য

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য এ কে এম জাকির হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক কৃষিশিক্ষা ও গবেষণানির্ভর হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম ও নবনিযুক্ত উপাচার্য এ কে এম জাকির হোসেন। গতকাল বুধবার ঢাকার মহাখালীতে একটি গেস্টহাউসে আলাপকালে এসব কথা জানান উপাচার্য।

এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংগতি রেখে কুড়িগ্রামের মানুষের উন্নয়নে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে সময় হবে না, ফলে পরের শিক্ষাবর্ষ (২০২৩-২৪) থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।

গত ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে চার বছরের জন্য এ কে এম জাকির হোসেনকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান। ৮ মে তিনি উপাচার্য হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র প্রস্তুত করতে বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

শিগগির কুড়িগ্রাম শহরে ভবন ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, ঢাকার কাজ শেষ করে কুড়িগ্রাম গিয়ে সাধারণ মানুষ, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যায়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস কোথায় হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী, সরকারের কাছে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে আবেদন জানানো হবে। আপাতত ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যায়ের দাপ্তরিক কাজ চালানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ রাজারহাট, কেউ চিলমারী, আবার কেউ উলিপুর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষের চাওয়া, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাটিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হোক।

জাকির হোসেনের ভাষ্য, উত্তরাঞ্চলের কৃষি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে ক্ষেত্রে এ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী যাতে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি লাভ করে, সে জন্য কোর্স, কনটেন্ট ও কারিকুলাম সেভাবেই প্রস্তুত করা হবে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা ও কৃষি ওপর ভিত্তি করে নতুন ধরনের বিভাগ চালু করা হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যাতে সরাসরি গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুধু চাকরি নয়, শিক্ষার্থীরা ভালো গবেষণা করে যাতে সারা বিশ্বে কৃষি উন্নয়নে কাজ করতে পারেন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন, সেই শিক্ষা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এ কে এম জাকির হোসেন। তাঁর চাওয়া, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস কমিউনিকেশন, রিনিউঅ্যাবল এনার্জি অ্যান্ড গ্রিন টেকনোলজি, জিওইনফরমেটিকস অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি, ফুড সেফটিসহ বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের কৃষির রূপান্তরগুলো শিক্ষা দেওয়া যায়।

উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের গোড়া থেকেই এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি অ্যাটাচমেন্ট, ফারমার ফিল্ড অ্যাটাচমেন্ট, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ও ইন্টার্নশিপে সম্পৃক্ত করা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ রাজারহাট, কেউ চিলমারী, আবার কেউ উলিপুর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষের চাওয়া, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাটিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হোক।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এ কে এম জাকির হোসেন। গতকাল বুধবার ঢাকার মহাখালীতে একটি গেস্টহাউসে
ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, কুড়িগ্রাম শহর হচ্ছে নয়টি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য যা যা দরকার, তার সবই কুড়িগ্রাম সদরে আছে। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, হাজী দানেশ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মূল শহরকে ধরেই গড়ে উঠেছে। তাই কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও কুড়িগ্রাম শহরের আশপাশে স্থাপিত হওয়া উচিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গবেষণা, কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও জীবন–জীবিকার সার্বিক উন্নয়ন করা সহজ হবে।

২০২১ সালের ২৮ জুন ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২১’ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। যাচাই-বাছাই ও আলোচনা শেষে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়। পরে ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেটভুক্ত হয়।

দেশের দশম এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ভিসি ঢাকায় আছেন। কিছুদিন পর তিনি অনেক বার্তা নিয়ে কুড়িগ্রামে আসবেন। তখন সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করা হবে।

মাইদুল ইসলাম, আবদুল মালেক, মুসফেক উজ্জ্বলসহ কুড়িগ্রামের স্থানীয় কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, তাঁদের চাওয়া দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হোক। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাটিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা হোক।