২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

চবিতে চালু হলো ৭টি গবেষণাগার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের জন্য ৭টি গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ তলায় স্থাপিত এসব গবেষণাগার আজ চালু করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

সাতটি গবেষণাগারের কোনোটিতে ক্ষুদ্র অণুজীবের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে হবে গবেষণা, কোনোটিতে গবেষকেরা সংক্রামক রোগের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করবেন। আবার প্রতিষেধকের নকশা তৈরি হবে কোনোটিতে। কেনা হয়েছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। সাজানো হয়েছে প্রতিটি কক্ষ। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর হবে এসব গবেষণাগার।

আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাত গবেষণাগার উদ্বোধন করেছেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের জন্য গবেষণাগারগুলো তৈরি করা হয়েছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ তলায় স্থাপন করা হয়েছে এসব গবেষণাগার।

বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি নাজনীন নাহার ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন তৌহিদ হোসেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল ফোরকান, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরিচালক গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস, চট্টগ্রামের পরিচালক নাসির উদ্দিন। আয়োজনে ‘ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী তৈরি’ বিষয়ে বক্তব্য দেন বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান।

উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, বাংলাদেশের নারীরা সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছেন। এর উজ্জ্বল উদাহরণ বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। তিনি রীতিমতো দেশবাসীকে চমকে দিয়েছেন। তাঁর কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণাগার তৈরি হলো। এসব গবেষণাগারের ফলাফল নিশ্চয়ই মানুষের কাজে লাগবে। উপাচার্য গবেষকদের ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত ইনসুলিনের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করতে পরামর্শ দেন।

‘ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী তৈরি’ শীর্ষক বক্তৃতায় সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান নিয়ে এত কথা হয়, তা জানা ছিল না। সার্স কোভিড-২-এর জীবনরহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্স) করার পর তোলপাড় শুরু হয়। বুঝতে পারলাম, এ দেশে বিজ্ঞান ও গবেষণা নিয়ে তরুণদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাই গবেষণাকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশজুড়ে। বিকেন্দ্রীকৃত করতে হবে। ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে হবে বিজ্ঞানচর্চাকে।’

তরুণদের দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন সেঁজুতি সাহা। তিনি বলেন, ‘গবেষণাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে।

সুইজারল্যান্ডের ফাইন্ড ডায়াগনস্টিক ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার তৈরি হলো। এখানে জিনোম সিকোয়েন্সের কাজ হবে। গবেষণা হবে, যা মানুষের কাজে লাগবে। কারণ, সংক্রামক ব্যাধি বোঝার জন্য সিকোয়েন্সের বিকল্প নেই। সিকোয়েন্স করার কারণেই তাড়াতাড়ি করোনার টিকা পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ফাইন্ড ডায়াগনস্টিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

তারা জিনোম সিকোয়েন্সের কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য আমার অর্থ দরকার ছিল না। দরকার ছিল ঢাকার বাইরের তরুণ গবেষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। আর সে লক্ষ্যেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকোয়েন্সের ল্যাব তৈরি করা হয়েছে।’

গবেষণাগারে চলবে নানা কাজ

ছয়টি আলাদা গবেষণাগার নিয়ে ‘বায়োটেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার (ব্রিক) তৈরি করা হয়। ব্রিকের আওতায় আছে জিন ও প্রোটিন গবেষণাগার, অণুজীব গবেষণাগার, রোগতত্ত্ব গবেষণাগার, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণাগার, ক্যানসার গবেষণাগার, পরিবেশ ও দৈহিক বৃদ্ধি গবেষণাগার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি গবেষণাগার।

পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে জিনোম সিকোয়েন্স বিষয়ে ‘নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্স রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাং (এনরিচ)’ গবেষণাগার। এ গবেষণাগারে মূলত অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জিনোমবিন্যাস উন্মোচনের কাজ করবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নাজনীন নাহার ইসলাম বলেন, এসব গবেষণাগারে নানা রকমের কাজ চলবে। ক্যানসার, সংক্রামক রোগ, মহামারি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান হবে। ভবিষ্যৎ যেকোনো মহামারিতে বাইরের সাহায্য ছাড়াই জিনোম সিকোয়েন্স করা যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম অণুজীবের সংক্রমণ, পরিবর্তন ও রূপপ্রকৃতির কারণ অনুসন্ধান করা হবে।

শিক্ষক আদনান মান্নান জানান, প্রতিটি গবেষণাগারে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। রয়েছে সিকোয়েন্সার, আরটি–পিসিআর যন্ত্র, পিসিআর, জিন পালসার, ন্যানোড্রপ, এলাইজা, ওয়েস্টার্ন ব্লট, ফার্মেন্টর, শেইকার ইনকুভেটর, ফ্লোর মিটার, স্পেকটোফটোমিটার, বায়োসেফটি কেবিনেট-১–সহ নানা যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রের সাহায্যে ক্যানসার, সংক্রামক ব্যাধি, অটিজম, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, গলগণ্ড, কলেরা, টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, অণুজীব সংক্রমণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, জলবায়ুসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনসহ নানা গবেষণা চলবে।

এনরিচ গবেষণাগারের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান। এ ছাড়া ব্রিকের ছয়টি গবেষণাগারে পরিচালক হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আল ফোরকান, লুলু ওয়াল মারজান, এস এম রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, নাজনীন নাহার ইসলাম, এ এম আবু আহমেদ, লায়লা খালেদা এবং এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী।