তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় থেকেও উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত কনিষ্ক চাকমার

কনিষ্ক চাকমা
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় আছেন কনিষ্ক চাকমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে ভর্তি ও লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে তাঁর। অসুস্থ কৃষক বাবার পক্ষে কনিষ্ক চাকমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সামর্থ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের পাবলাখালী গ্রামের রাঙাজয় চাকমার ছেলে কনিষ্ক চাকমা। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করছেন। অবসর সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। এ করেই এত দিন কেবল ইচ্ছাশক্তির কারণে শিক্ষাজীবনে একের পর এক সফলতা পেয়েছেন কনিষ্ক।

কনিষ্ক চাকমার সব ঠিক ছিল, কিন্তু ২০১২ সালে দুর্ঘটনায় তাঁর বাবার একটি পা ভেঙে যায়। এরপর তাঁর বাবার চিকিৎসা দিতে গিয়ে লেখাপড়ার অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় কনিষ্ক চাকমার। পরে তাঁর মামার বাড়ি সারোয়াতলী গ্রামে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁর মামা বিনয় চাকমা সারোয়াতলী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বিনা বেতনে আবেদন করার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। সারোয়াতলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ব্যবসা শাখায় এসএসসিতে জিপিএ–৪ পান কনিষ্ক চাকমা। এইচএসসিতে জিপিএ–৪ দশমিক ১৫ পান। চলতি বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। এতে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। তবে কনিষ্ক চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আগ্রহ জানিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি ও পড়াশোনা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এত দিন টাকার সহযোগিতা দিতে না পারলেও পড়াশোনায় সাহস জুগিয়েছেন তাঁর মা আনন্দ রানী চাকমা। গত বছরের ৭ জানুয়ারি তিনিও মারা যান।

কনিষ্ক চাকমা বলেন, ‘তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সি ইউনিট থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১২ অক্টোবর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ অক্টোবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ নভেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।’

খেদারমারা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিল্টু চাকমা বলেন, পঞ্চম শ্রেণি অবস্থায় তাঁর বাবার পা ভেঙে যায়। এরপর মামার বাড়ির থেকে স্কুলজীবন কেটেছে। এসএসসি পরীক্ষার পর মা–বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ ও টিউশনি করে পড়াশোনা করেছেন। তাঁরপরও লেখাপড়া ছাড়েননি। ইচ্ছাশক্তির কারণে একের পর এক সফলতা পেয়েছেন। এখন সহযোগিতা ছাড়া উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। তাঁর বাবার পক্ষে তাঁকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি ও পড়ানো সম্ভব নয়। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পড়াশোনার খরচ দেওয়া কনিষ্ক চাকমার বাবার সামর্থ্য নেই।

কনিষ্ক চাকমার বাবা রাঙাজয় চাকমা বলেন, ‘আমি পুরোপুরি সুস্থ নয়। সামান্য কৃষিকাজ করে তিন সন্তানকে লেখাপড়া করানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ক সবার বড়। মেজো মেয়ে রাঙামাটি মেডিকেলে নার্সিং পড়ছে ও ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে সামনে ভর্তি হবে।’

শিজক কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ দত্ত চাকমা বলেন, ‘কনিষ্ক চাকমা আমাদের কলেজে পড়েছে। সে নম্র–ভদ্র ও পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী। দুর্গম গ্রামের ছেলে কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়া তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।’