নান্দনিক ক্যাম্পাসে সৃজনশীল শিক্ষা

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সব শর্ত পূরণ করে এটি পেয়েছে স্থায়ী সনদ। মোট ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৩-৪টির রয়েছে এই স্থায়ী সনদ।

সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন সমমনা বিদ্যানুরাগীর হাতে যাত্রা শুরু এ প্রতিষ্ঠানের। তাঁদের স্বপ্ন ছিল দেশের মধ্যবিত্তের জন্য মানসম্মত উচ্চশিক্ষা। প্রাচ্যের সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্যের উদ্ভাবনার সমন্বিত জ্ঞানের শিক্ষায় যোগ্য মানবসম্পদ তৈরিই ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের লক্ষ্য। আর তাই ছোট্ট পরিসরে শুরু করেও এখন গুণে-মানে-আকারে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ এ বিশ্ববিদ্যালয়।

মহাখালীর ভাড়া করা একটি ভবনে মাত্র ২০ শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষক নিয়ে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, ২৯৫ জন পূর্ণকালীন ও ১৪৫ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন। তাঁদের মধ্যে আবার ১২৫-এর বেশি পিএইচডিধারী শিক্ষক।

রাজধানীর আফতাব নগরের প্রধান ফটকের সামনে এর পরিবেশবান্ধব সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি নান্দনিক ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথের ডান পাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির শহীদ মিনার, যা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। লাল রঙের এ স্থাপনা যেন তরুণদের উদ্দীপ্ত করে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের চেতনায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথের ডান পাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির শহীদ মিনার।

এ বিশ্ববিদ্যালের ১৪টি বিভাগ, ২৫টি ক্লাব, লাইব্রেরি, গবেষণাকেন্দ্র, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেন্টার, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল, মেডিকেল সেন্টার—সবকিছু নিয়োজিত রয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও কর্মে যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ব্যতিক্রমী দিক হলো তুলনামূলক কম টিউশন ফি নিলেও বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছেই সে অর্থের একটা বড় অংশ ফেরত চলে যায়। আর এসব কারণেই হয়তো সবশেষ ১৬তম সমাবর্তনেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। পাশাপাশি এসেছে নানা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

সম্প্রতি এডি সায়েন্টিফিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করেছে দেশের সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের স্বস্তি দিতে কোনো দাবি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০ শতাংশ টিউশন ও শতভাগ স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিটি ফি মওকুফ করেছে। এটা আরও দুই বছর অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-কর্মকর্তারা বেতনের টাকার একটা অংশ তুলে দিয়েছেন অসহায় মানুষদের অন্ন সংস্থানে।

সময়ের চাহিদা ও জ্ঞানের মৌলিকত্ব প্রতিষ্ঠায় পরিচালিত বিভাগগুলো

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চালু হতে যাচ্ছে ম্যাথমেটিকস ও ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগ। লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের অধীন আছে ইংরেজি, আইন, সামাজিক সম্পর্ক, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। এ ছাড়া ব্যবসায় ও অর্থনীতি অনুষদের অধীন রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগ।

নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবনায় সর্বদা সচেষ্ট থাকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং। এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত দক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি। এখানে একাডেমিক বিভিন্ন বই ছাড়াও রয়েছে অনেক গবেষণাগ্রন্থ, রেফারেন্স বই, জার্নাল ও ই-বুকের বিশাল ভান্ডার। একাডেমিক কাজের বাইরেও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল দক্ষতা বাড়ানোর জন্য রয়েছে নানা ধরনের ক্লাব। নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাবের মাধ্যমে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি হন। সর্বোপরি একজন নবীনকে নতুন পৃথিবীর উপযোগী করে গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।