বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সব সুবিধার আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ–এর ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

মা-মাটি-মানুষ-মাতৃভাষার প্রতি মমত্ব ও দায়িত্ববোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম শহর মুজিবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজিসি ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ ১৯৮২ সালে বেগম গুল চেমন আরা ট্রাস্ট (বিজিসি ট্রাস্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ একর নিজস্ব ভূমির ওপর বিজিসি ট্রাস্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে এই এলাকা দেশে–বিদেশে ‘বিজিসি বিদ্যানগর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা এত বড় প্রকল্প এ দেশে বিরল।

যাত্রা শুরু

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০০১ সালে সরকারের অনুমোদন লাভ করে। এরপর থেকে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা ইতিমধ্যে দেশ–বিদেশে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে দেশ গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত আছেন। নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির পাঠদান চলে। উচ্চশিক্ষা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রযুক্তিময় ও আধুনিক শিক্ষা

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে চন্দনাইশ বিদ্যানগর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকমণ্ডলী, কর্মকর্তাদের জন্য কর্তৃপক্ষ ফ্রি ট্রান্সপোর্ট সুবিধা প্রদান করেছে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অটোমেশন করা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে লগইন করে নিজ নিজ ফলাফল, টিউশন ফি পরিশোধের তথ্য জানতে পারছে। তা ছাড়া ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল ছাড়াও লাইব্রেরি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক কার্যক্রম ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

অনুষদ, শিক্ষকমণ্ডলী ও প্রোগ্রামগুলো

বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, ইংরেজি, ফার্মেসি, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ। ৬ বিভাগের অধীনে বিবিএ, এমবিএ, এমবিএ (এক্সিকিউটিভ), বিএ (অনার্স) ইন ইংলিশ, এমএইন ইংলিশ, বি ফার্ম (অনার্স), বিএসসি (অনার্স) ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এলএলবি (অনার্স), বিএসএস ইন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। সব প্রোগ্রামগুলোর জন্য দেশি-বিদেশি ডিগ্রিধারী দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী শিক্ষার্থীদের পড়ানোয় নিয়োজিত। মূল বিশেষত্ব হচ্ছে বেশির ভাগ শিক্ষকই পূর্ণকালীন। তা ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষকমণ্ডলী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খণ্ডকালীন ক্লাস নিয়ে থাকেন।

গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিক সুবিধা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পার্শ্বে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে ১০০ একর আয়তনবিশিষ্ট বিজিসি বিদ্যানগর, চন্দনাইশে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত হলেও এ ক্যাম্পাসে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। ক্যাম্পাস ভবনে ওয়াইফাই সুবিধা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সেমিনার হল এবং নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। কোর্স কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ সুপরিসর ল্যাবরেটরি রয়েছে। তা ছাড়া খেলার মাঠ, লেক, বিশাল শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু ফ্রিডম স্কোয়ার এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ।

বিনা মূল্যে পরিবহন

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পরিবহন সুযোগ প্রদান করছে।

বিশেষ আর্থিক সুবিধা ও মেধাবৃত্তি প্রদান

তুলনামূলক কম টিউশন ফি এবং মাসিক কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে টিউশন ফি প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার মেধার ফলাফল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বিধবার সন্তান, সহোদর, উপজাতীয় শিক্ষার্থী, জাতীয়ভাবে স্বীকৃত খেলোয়াড়, শিল্পী সর্বোপরি অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। ১০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। এ ছাড়া রয়েছে সেমিস্টার ফলাফলের মাধ্যমে বিশেষ বৃত্তির সুযোগ। তা ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামে অবস্থিত কলেজগুলো থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের সব প্রোগ্রামে টিউশন ফি ১০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়।

গ্রন্থাগার

প্রায় ২০ হাজার বই ও দেশি-বিদেশি জার্নালসমৃদ্ধ লাইব্রেরিকে শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকমণ্ডলীর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরির সদস্যভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশি–বিদেশি অসংখ্য ই জার্নাল ও ই-বুক অনলাইন এক্সেস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিবিএ ও এমবিএর শিক্ষার্থীরা বিশেষ টিউশন ফি ছাড় নিয়ে বাইনারি ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ায় ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তারা পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ টিউশন ফি ছাড় পাচ্ছেন। তা ছাড়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, চট্টগ্রামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসে ফরাসি ভাষা শেখার সুযোগ পান।

করোনাকালেও সেশনজটমুক্ত

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পরপরই ইউজিসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে অনলাইন কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটবিহীন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেন।

সহপাঠক্রম

শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম উৎসাহিত করে থাকেন। ওয়ার্কশপ, ট্রেনিং, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্কের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয়ভাবে স্পোর্টস, কালচারাল কমিটি ও ডিবেটিং সোসাইটি রয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানও শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে। বিজনেস স্টুডেন্ট সোসাইটি (বিএসএস), এলাইড কম্পিউটার স্ট্রিমস (এসিএস), সেন্টার ফর ইংলিশ লেংগুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার (সেল), ফার্মা ক্লাব, রোবটিকস ক্লাব, কোডিং ক্লাব প্রভৃতি। এসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান অনুসারে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আয়োজন করে থাকে। তা ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ন্যাশনাল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ও আয়োজন করেছে। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়মিত সামার স্কুল, উইন্টার স্কুল আয়োজন করা হয়। তা ছাড়া প্রতিটি বিভাগ নিয়মিত শিক্ষাসফরের আয়োজন করে থাকে। এ সবের পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ, মিলাদ মাহফিল, বাণী অর্চনাসহ সব জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবস ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়।

কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও রিসার্চ

গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুণগত মান নিশ্চিতকরণ সেল গঠন করেছে। তা ছাড়া ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হায়ার এডুকেশন এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় ইনস্টিটিউশন কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) গঠন করেছে। যাতে গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যালামনাই, এমপ্লয়ারসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সার্ভের মাধ্যমে প্রত্যেক বিভাগ সেলফ এসেসমেন্ট, পিয়ার রিভিউ, ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান নীতিমালা অনুযায়ী সম্পন্ন করেছে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা যায়।

আরও সুবিধা

বিজিসি ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত ইব্রাহিম ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতালের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ছাড়কৃত খরচে আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। শুধু শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী নয়, তাঁদের পরিবারও এই সুযোগের আওতাভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসেই রয়েছে স্বল্প খরচে ক্যানটিন সুবিধা।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন https://bgctub.ac.bd/ সাইটে। ই-মেইল: [email protected] / [email protected] ফোন: ০১৭৫৫৫৮৮৬২৭, ০১৭৫৫৫৮৮৬১৯