সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস খুলছে ১ অক্টোবর, বহিরাগত প্রবেশ–অবস্থান নিষিদ্ধ

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বহিরাগত ব্যক্তি প্রবেশ ও অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজের ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হচ্ছে আগামী ১ অক্টোবর। ছাত্রাবাস খোলার সিদ্ধান্ত বিজ্ঞপ্তি আকারে আজ রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে সাঁটানো হয়েছে।

ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ছাত্রাবাসে উঠতে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

এমসি কলেজের প্রশাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শতবর্ষী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ করা হয়েছিল। ছাত্রাবাসে মোট আসনসংখ্যা ৩৪৫। বন্ধ ঘোষণার আগে ৩৪৫টি আসন পূর্ণ ছিল।

ছাত্রাবাস খোলার বিজ্ঞপ্তিতে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বহিরাগত প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ এবং করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ ও এডিস মশা বিস্তাররোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গাইডলাইন অনুসরণসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস ফি কমানো হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৪৪ টাকা ফি দিয়ে ছাত্রাবাসে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ দখল করে ছাত্রলীগের কর্মীরা সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্রলীগের ছয় কর্মী এমসি কলেজের সামনে টিলাগড় মোড় থেকে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে তাঁর স্বামীর সামনে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় দেশে ও বিদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলে ধর্ষণের ঘটনায় একে একে গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছয়জন। ছাত্রাবাসের বাইরে থেকে সহযোগিতা করার অভিযোগে আরও দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দখল করা একটি কক্ষ থেকে পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে তরুণীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেবল এক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রাবাস খোলার সিদ্ধান্তের আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা ও বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ বন্ধে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
যেকোনো অপরাধ এখন আর ঘটলে নয়, আগেই ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজরদারির জন্য এমসি কলেজের সীমানার মধ্যে নগর পুলিশের কনটেইনার বক্স স্থাপন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ৫৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ছাত্রাবাসেও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।