১৬ পেরোল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস শুরু ১৮৫৮ থেকে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শুরু ১৮৫৮ সাল থেকে। সে বছর ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে পুরান ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। ১৫৩ বছরের বিবর্তনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাফল্যের সাক্ষী হয়ে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর পর থেকেই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আজ ১৬ বছর পেরিয়েছে প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রয়াত জগন্নাথ রায় চৌধুরী ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। পড়াশোনার সুখ্যাতি ও প্রসারে অনুপ্রাণিত হয়ে জগন্নাথ রায় চৌধুরীর ছেলে কিশোরী লাল রায় চৌধুরী ১৮৮৪ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করেন। তখন এর নাম বদলে করা হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৭ সালে শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে স্কুল ও কলেজ শাখা আলাদা হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। তখন এর নাম ছিল ‘জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’। এর ২৮ বছর পর ১৯৪৯ সালে এই কলেজে আবার স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি জগন্নাথ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।

এরপর ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ অনুযায়ী ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট আছে। শিক্ষার্থী ১৩ হাজারের বেশি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হবে আগামীকাল

প্রতিবছরের মতো এ বছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত থাকলেও আজ বুধবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে ছুটি থাকায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মাহির আমির বলেন, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ১৬ বছরের হিসাবে অনেক গড়মিল পাওয়া যাবে সত্যি। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা করতে হবে। একটা নতুন ভোরের সূচনা করতে চাই, যেন ক্যাম্পাস আমাকে সব সময় স্মরণ করে রাখে।

মাহির আমিরের প্রত্যাশা, ‘নতুন সূর্য উদিত হোক, নতুন বছরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সঠিক গুণগত মানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হোক দ্রুত সময়ে। প্রাণ ফিরে আসুক শিক্ষার্থীদের মনে। প্রশাসন আমাদের চাওয়াগুলো পূরণ করুক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নানা সংকট ও প্রতিকূলতা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তাঁদের কর্মক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসে প্রত্যাশা থাকবে প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা এবং আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা।

সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া রোশনির প্রত্যাশা

বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব করার মতো অনেক অর্জন যেমন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু সংকট। আবাসনসংকট থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও লাইব্রেরির অভাব, শিক্ষার্থীদের উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশসংকটের মতো সীমাবদ্ধতাগুলো বহু বছরের। খুব তাড়াতাড়ি এই সংকট নির্মূল হোক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আরও সমৃদ্ধ ও আধুনিক হয়ে উঠুক।

চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমার প্রত্যাশা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা করে যেন প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি শিল্পমনস্ক, সুন্দর, শান্তিপ্রিয়, অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারে।’

ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে নানান সমস্যায় ছিলাম কিন্তু নবীন শিক্ষার্থীদের কেন একই সমস্যা নিয়ে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে হবে। প্রশাসন সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য ব্যয় না করে ফেরত দেয়, সেটা আসলে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটাই চাওয়া, শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেবে প্রশাসন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুমান শিকদার বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও সময়ের তুলনায় আমাদের অর্জন অনেক স্বস্তিজনক। অবকাঠামোগত অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এখানকার শিক্ষকেরা বৈশ্বিক পর্যায়ে বেশ ভালো অবদান রাখতে শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীরাও দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য অবস্থানে নিজেদের পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছেন। আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ। এটি সম্পন্ন হলে অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ কমে আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জ্ঞান-সংস্কৃতিচর্চা ও গবেষণার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আদর্শ পরিবেশ পাবেন।’

নতুন ক্যাম্পাসের স্বপ্ন

কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। প্রায় ২০০ একর জমির ওপর ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এই ক্যাম্পাস নির্মাণের মাধ্যমে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট দূর হবে। পাশাপাশি একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৬ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন অনেক। সবচেয়ে ঈর্ষণীয় হলো এর শিক্ষকমণ্ডলী। বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক শিক্ষক এখানে পড়াচ্ছেন ও গবেষণা করছেন। দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করছেন। এসব অভিজ্ঞ শিক্ষকের সান্নিধ্যে ছাত্রছাত্রীরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখছেন

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এখন অনেক উঁচুতে। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জায়গায় নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে চলছে। শিগগিরই মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হবে। এরই মধ্যে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সীমাবদ্ধতা অনেক আছে। তারপরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আশাহত নয়।