যে ১০ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে কঠিন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন রকমের। কোথাও কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং উচ্চমানের শিক্ষার জন্য দেশগুলো পরিচিত, আবার কোথাও দক্ষতাভিত্তিক শিখনপ্রক্রিয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। দেখে নেওয়া যাক কোনো কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে কঠিন হিসেবে বিবেচিত।
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ স্কুলঘণ্টা শেষে ‘হাগওন’ নামে বেসরকারি টিউশন সেন্টারে রাত পর্যন্ত ক্লাস করে। এরপর ‘সুনুং’ নামের একটি পরীক্ষা দেয় তারা। কলেজ ভর্তির এ পরীক্ষা তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। তবে এ পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্য তৈরি করে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। ঘুমের ঘাটতি ও চরম প্রতিযোগিতার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
জাপান
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় কঠোর শৃঙ্খলা মানতে হয়, অনেক সময় বন্ধের দিন শনিবারেও স্কুল থাকে। উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়, যা উল্লেখযোগ্য চাপ তৈরি করে। শিক্ষার্থীরা ‘জুকু’তে পড়াশোনা করে। ‘জুকু’ হলো জাপানের একধরনের কোচিং স্কুল, যা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলের পাশাপাশি কলেজ ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে। জাপানে পড়াশোনার জন্য সাধারণত প্রবেশিকা পরীক্ষা যেমন ‘এক্সামিনেশন ফর জাপানিজ ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট-ইজেইউ’ দিতে হয়, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির একটি সাধারণ পরীক্ষা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্তরের জন্য ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইএলটিএস বা টোয়েফলের মতো পরীক্ষাতেও অংশ নিতে হতে পারে, তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে
চীন
গাওকাও চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের একটি পরীক্ষা। ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা একটানা ১২ বছর পড়াশোনা শেষে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে প্রস্তুতিমূলক নানা পরীক্ষায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ পরীক্ষার ফলাফল স্কোরের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মেলে। গাওকাও পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন, তা নির্ধারিত হয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জীবন ও কর্মসংস্থান অনেকাংশে নির্ভর করে এ পরীক্ষার ফলের ওপর। এ পরীক্ষায় এক থেকে দেড় কোটি শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষার মৌসুমে চরম উদ্বেগ ও অসুস্থতার ঘটনাও ঘটে।
সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা প্রতিটি স্তরেই চরম চাপের মুখে পড়ে। ১২ বছর বয়স থেকেই জাতীয় পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার পথ নির্ধারিত হয়। মেধাভিত্তিক এই ব্যবস্থায় বিষয়ভিত্তিক গভীর দক্ষতা প্রয়োজন। যদিও সংস্কার চলছে, তবু অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ উদ্বেগের মধ্যে থাকে। কারণ, ব্যর্থতার সুযোগ খুব কম।
ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ডের শিক্ষা মডেল কঠিন বলে বিবেচিত হয় মূলত কয়েকটি নতুন চ্যালেঞ্জের কারণে। এর মধ্যে আছে উচ্চ ও নিম্নমানের শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি, মেধাবীদের জন্য যথেষ্ট সুযোগের অভাব, সহপাঠীদের চাপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ক্রমেই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠা।
রাশিয়া
রাশিয়ার শিক্ষা শৃঙ্খলা, মুখস্থবিদ্যা এবং প্রতিযোগিতামূলক ভর্তিব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ইউনিফাইড স্টেট পরীক্ষাকে (EGE) বড় বাধা হিসেবে ধরা হয়। ছোটবেলা থেকেই ভারী পড়াশোনা শুরু হয় এবং সফলতার জন্য অতিরিক্ত টিউশন জরুরি হয়ে পড়ে, যা শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।
ভারত
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা কঠিন কারণ এখানে বিশাল সিলেবাস, মুখস্থনির্ভর শিক্ষা এবং আইআইটি-জেইই, নিটের মতো ভয়ংকর প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও সীমিত বিশ্ববিদ্যালয় আসন প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তোলে। অনেক শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভর করে, যা চাপ ও দীর্ঘ অধ্যয়ন রুটিনে পরিণত হয়।
হংকং
হংকংয়ের শিক্ষায় কঠোর পরীক্ষা ও পারফরম্যান্সের ওপর জোর দেওয়া হয়। কঠিন পাঠ্যক্রম ও নিয়মিত মূল্যায়নের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্কুল-পরবর্তী টিউশন বা ‘শ্যাডো এডুকেশন’–এর দিকে ঝোঁকে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার প্রতিটি ধাপে পরিবর্তনের নিয়ম কঠোর হওয়ায় ভালো ফল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুইজারল্যান্ড
সুইস শিক্ষার্থীরা ১১ বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষায় বহু ভাষা ও কঠোর পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। একাডেমিক এবং বৃত্তিমূলক উভয় পথেই কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন, যেখানে স্বশিক্ষা বা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। উচ্চমান ও সীমিত আসন প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা কঠিন মূলত উচ্চ ব্যয়, সীমিত আসন এবং একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের তীব্র চাহিদার কারণে। এসএটি, এসিটি এবং এপি পরীক্ষার মতো কঠিন মূল্যায়ন পদ্ধতি রয়েছে। আইভি লিগ ভর্তি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। কেবল নম্বর নয়; বাস্তব দক্ষতা এবং সমন্বিত শিক্ষা সফলতার চাবিকাঠি। তথ্যসূত্র: ওউন নিউজ