যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক রোবট প্রচলনে গবেষণা করছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সাইফুল
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন। রাস্তাঘাট চেনাসহ যুক্তরাষ্ট্রের পড়াশোনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন অনেকে। শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস রোবট প্রচলনে গবেষণা করছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও শিক্ষক এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র শিক্ষাঙ্গনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নীতি।
শুধু পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীরা যেন বিপথে না যান সে বিষয়েও কাউন্সেলিং ও মনিটরিং করবে এই সামাজিক রোবট। এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ধূমপান করেন, তাঁদের ধূমপান না করা জন্য কাউন্সেলিং করবে এই সামাজিক রোবট। লজ্জা, গোপনীয়তা ও আত্মসম্মানবোধের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের কথার চেয়ে রোবটের কথা বেশি শুনতে পারেন শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়েও বিভিন্ন পরামর্শ দেবে সামাজিক রোবট। এ ছাড়া শিক্ষককে ক্লাসরুমে পাঠদানে সহায়তা ও লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য টিউটর হিসেবে কাজ করবে রোবট।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনে (এনএসএফ) ২০০৪ সালে বিজ্ঞানী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি সমাজবিজ্ঞানী ও সফটওয়্যার প্রোগ্রামার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, মেনকাটোতে কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর শিক্ষকতা ও গবেষণার বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সায়েন্স কমিউনিকেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন, হিউম্যান রোবট কমিউনিকেশন ও হেলথ কমিউনিকেশন। এ ছাড়া কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শিক্ষকতা করেছেন সাইফুল ইসলাম। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল মেডিকেল শিক্ষায় ইন্টারপ্রফেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিস ও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা–পরবর্তী সুস্থ জীবনযাপনে প্রযুক্তির ব্যবহার। সেখানে শিক্ষকতার বিষয় ছিল চিকিৎসকদের কমিউনিটি এবং সোশ্যাল মেডিসিন গবেষণাপদ্ধতি শেখানো।
অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামে। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন।
সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ ধারণা থেকে অনেকে মনে করেন, রোবট উদ্ভাবন শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাজ। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। একটি রোবট উদ্ভাবনে অনেক ধরনের ধাপ থাকে। আমরা যারা সামাজিক বিজ্ঞান ও কমিউনিকেশনের গবেষক, তাদের কাজ হলো রোবটের ভাষা ও কমিউনিকেশন কৌশল উন্নত করা। আমি যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা শুরু করি, তখন এই সামাজিক রোবটের ক্যাম্পাসে প্রচলন নিয়ে ভাবা শুরু করি। আমাদের কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করছি শিগগরিই ক্যাম্পাসে রোবট হাঁটছে দেখতে পাব।’
সামাজিক রোবটের ব্যবহার শুধু ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পরিবারে যেসব মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্ত, তাদের সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো, রক্তচাপ মাপাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবার কাজ করবে সামাজিক রোবট। আমার বাবা একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। বাবার নামে এই রোবটের নামকরণ হবে শাহাবুদ্দিন রোবট।’
সামনের পৃথিবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটের
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট বিষয়ে পড়াশোনার ওপর জোর দিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমার দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ভালো। এখন আরও ভালো করতে হবে। সামনের পৃথিবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটের। তাই এসব বিষয় নিয়ে বেশি পড়াশোনা করতে হবে।’
সামাজিক বিজ্ঞান ও কমিউনিকেশনের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার শিল্প ও বাণিজ্যের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে অনেক বেশি ব্যয় করে। ফলে সামাজিক বিজ্ঞান ও কমিউনিকেশনের শিক্ষার্থীদের চাহিদা রয়েছে এখানে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসহ সবক্ষেত্রে কমিউনিকেশনের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চাইলে—
যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চান তাঁদের উদ্দেশে সাইফুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ ভর্তির জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপাস ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভর্তির সময় এ দুটো বিষয় খুব ভালোভাবে যাচাই করা হয়। বাংলার পাশাপাশি প্রচুর ইংরেজি বই পড়তে হবে এবং ইংরেজি লেখার মান উন্নত করতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া আর উচ্চশিক্ষার একাডেমিক রাইটিং ভিন্ন জিনিস। ইংরেজি একাডেমিক রাইটিং বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও বই পড়ে উন্নত করতে হবে।