শিক্ষা অর্জনে সকলের সুযোগ সমান থাকতে হবে: আতিকুল ইসলাম

‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যগাথা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম (বামে) এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকছবি: প্রথম আলো

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিক্ষাকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির রূপ দিতে দুটি দিক নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমত, শিক্ষা হবে বৈশ্বিক মনোভাবাপন্ন। দ্বিতীয়ত, ধর্ম–বর্ণ–গোত্র নির্বিশেষে শিক্ষা অর্জনে সবার সুযোগ সমান থাকতে হবে।’

‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যগাথা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলেন উপাচার্য আতিকুল ইসলাম।

‘আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষে প্রথম আলো ডটকম আয়োজিত টক শোটি সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘একসময় শিক্ষার্জনকে শুধু অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেই ধরা হতো। কিন্তু শিক্ষা মানুষকে গণতান্ত্রিক এবং শুধু নিজের অধিকার নয়, অন্যের অধিকার নিয়েও সচেতন থাকতে উদ্বুদ্ধ করে।’

অনুষ্ঠানটি গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। অনুষ্ঠানে শিক্ষার বৈশ্বিক তাৎপর্য, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯২ সালে সালে প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তথ্যগুলো উল্লেখ করে আনিসুল হক জানতে চান, দেশ–বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অসংখ্য সফলতা অর্জনের পেছনে মূল রহস্য কী?

উত্তরে উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁদের দূরদৃষ্টি এবং কঠোর পরিশ্রমই এর সফলতার চাবিকাঠি। এ ছাড়া যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা নিজেদের শ্রম ও মেধা দিয়ে এর সাফল্যের পেছনে অবদান রাখছেন। ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী পাস করে চাকরি পাচ্ছে না—এমনটি সচরাচর দেখা যায় না।’

আনিসুল হক জানতে চান, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে বিশেষভাবে কোনো নজর দেওয়া হয় কি?’

উত্তরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মানের সর্বজনীন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের যোগ্য, নীতিবান এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম মানুষ হিসেবে প্রস্তুত করছে। ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী উদার মানসিকতা ও বিস্তৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক চাকরির বাজারে আমাদের শিক্ষার্থীদের বেশ চাহিদা রয়েছে।’

প্রসঙ্গক্রমে আতিকুল ইসলাম জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আছে, যার মধ্যে কিউএস ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম, কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশি–বিদেশি ২০০ সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের তিনটির মধ্যে অন্যতম, টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের কম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিশ্বে ২৬০টির মধ্যে এবং বাংলাদেশে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া চাকরি প্রাপ্তির সক্ষমতায় একই র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু র‍্যাঙ্কিং ভালো করার জন্য পড়াই না। আমাদের পাঠদানব্যবস্থা গবেষণাধর্মী। সে কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংপ্রাপ্ত হয়।’

এ পর্যায়ে সঞ্চালক আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদন দেওয়ার জন্য একসময় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?’

উত্তরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের পিএইচডির ছাত্র ভর্তির সক্ষমতা আছে, তাঁদেরই অনুমোদন দেওয়া উচিত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণত দুটি উদ্দেশ থাকে—জ্ঞান সৃষ্টি বা গবেষণা এবং এর বিতরণ। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণতা পায় না।’

একটা কথা প্রচলিত আছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বিত্তবানদের সন্তানদের জন্য। এ প্রসঙ্গে আপনি কী বলবেন—আনিসুল হকের এমন প্রশ্নের উত্তরে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই ভর্তি থেকে শুরু করে দরিদ্র ও মেধাবী, শুধু দরিদ্র এবং শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না। গত বছর আমরা প্রায় ২০ কোটি টাকা এবং কোভিড মহামহারি সময় বছরে গড়ে ১২০ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছি। তাই আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এমন দৃষ্টান্ত নেই।’

অনুষ্ঠানের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেন, এসএসসি ও এইচএসসিতে সম্মিলিতভাবে মোট আট পয়েন্ট এবং ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে ইংরেজি ও গণিতে দক্ষ হতে হবে।