৭ কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে বৈষম্য বাড়বে: শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য বাড়বে এবং অন্ধকারের গহিনে নিপতিত করবে। নারী শিক্ষা তথা উচ্চশিক্ষা সংকোচন হবে। এ জন্য তাঁরা চান এই সাত কলেজের জন্য অধিভুক্তমুলক (বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে কাঠামোয় চলে) একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। এ ছাড়া শিক্ষা ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি ও পদ সৃজনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়। রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫, ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজ ও শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থ সংরক্ষণ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা।
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ঘিরে সম্প্রতি নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি এই কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে, তার কাঠামো নিয়ে ওই সব কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষকেরা মনে করেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। এমনকি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে। তাঁরা বলছেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তাঁরাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়। এসব কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্বসংকটে পড়বে। এ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন। অন্যদিকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আগে থেকে আন্দোলন করে আসছেন কলেজগুলোর স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ কেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে (ডিসিপ্লিন) পড়ানো হবে। বিষয়ও কমে যাবে। এই খসড়া প্রকাশের পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের অনেক শিক্ষার্থীও এখন প্রস্তাবিত কাঠামোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে এ রকম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে আপত্তি জানানো হলো। মতবিনিময় সভার শুরুতে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব মো. মাসুদ রানা খান বলেন, সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘অ্যাফিলিয়েটিং ইউনিভার্সিটি’ হতে পারে। তিনি শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরে এই মতবিনিময় সভার বিষয়ে সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা (শিক্ষক) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পদোন্নতি ও গ্রেড বিবেচনায় তাঁরা চরম বৈষম্যের শিকার। সরকারি শিক্ষক কাঠামোতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন সরকারি কলেজের অধ্যাপকেরা, যাঁদের বেতন সর্বোচ্চ বেতন গ্রেড-চতুর্থ। এর মধ্যে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ঐতিহ্যবাহী ঢাকার সাত কলেজে নারী শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে সংকোচন হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন বেগমসহ বিভিন্ন জেলা ও ইউনিট কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।