খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম: পুরো বিষয় পুনর্মূল্যায়নে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খান অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে নিজের ছেলে, মেয়ে, শ্যালক-শ্যালিকার ছেলে, ভাতিজাসহ ৯ আত্মীয়স্বজনকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এসব প্রমাণিত হওয়ার পর উপাচার্যের ওই ৯ আত্মীয়স্বজনের নিয়োগ বাতিল করতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপাচার্য শহীদুর রহমানের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে গত বছরের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ দিলেও তা মানেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে বাছাই বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগও বাতিলের ব্যবস্থা করতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রায় সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এই নির্দেশে শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

এখন দীর্ঘদিন পর এসে ওই সব সিদ্ধান্ত ও ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুসহ পুরো বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য নতুন একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এক সভায় নতুন এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা যায়, তবে কমিটির সদস্যদের নাম বলেননি তাঁরা। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই কমিটিতে থাকছেন।

আরও পড়ুন

২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উপাচার্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুর রহমানকে নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটি গঠনের এক বছরের বেশি সময় পর গত বছরের জানুয়ারিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের আত্মীয়স্বজনের নিয়োগের তথ্য উঠে আসে।

আরও পড়ুন

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন জমার দীর্ঘদিন পর ব্যবস্থা নিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে উপাচার্যের পরিবারের সদস্যসহ ৯ আত্মীয়ের নিয়োগ বাতিল করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও কয়েকটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালাটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে যুগোপযোগী করা, ভবিষ্যতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ, ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া বাছাই বোর্ড গঠন না করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।

আরও পড়ুন