ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অন্য উচ্চতায়’ নিতে চান নতুন উপাচার্য মাকসুদ কামাল

দায়িত্ব নেওয়ার পর বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমারও বিশ্ববিদ্যালয়। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন বিশ্বের শিক্ষা–মানচিত্রে একটি অন্য উচ্চতায় যায়। সামগ্রিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অন্য উচ্চতায় উপনীত করব।’

আজ শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে সদ্য সাবেক উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মাকসুদ কামাল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ডিন, প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা নতুন উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে ধন্যবাদ জানান নতুন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। গত বুধবার আমাকে ডেকেছিলেন এবং পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার জন্য কীভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমারও বিশ্ববিদ্যালয়। আমি চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন বিশ্বের শিক্ষা–মানচিত্রে একটি অন্য উচ্চতায় যায়। সে জন্য যত সহযোগিতা করা দরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে সব ধরনের সহযোগিতা তাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে করবেন। তাঁর দৃষ্টি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন মানসম্মত একটা জায়গায় উপনীত হয়, সে জন্য আমাদের সবাইকে একটি টিম হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক সব দায়িত্বেই আমি ছিলাম। সেই সুবাদে আমার অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক কাজ করব। যত দিন আমি দায়িত্বে থাকি, তত দিন একটি টিম হিসেবে আপনাদের সঙ্গে কাজ করব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। জাতি গঠনে ১০০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে কাজগুলো করে গেছে, সেগুলোকে এখন আমরা প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে পেরেছি। আবার কোথাও কোথাও গ্যাপও (ঘাটতি) হয়েছে৷...এই অভিজ্ঞতাগুলো ডিন, পরিচালক, চেয়ারম্যানসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে যেমন নেব, পাশাপাশি আমরা সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করব।’

গবেষণার সংখ্যা নয়, জাতি গঠনে তার প্রভাব কী, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ

নতুন উপাচার্য আরও বলেন, ‘গবেষণার সংখ্যা নয়, বরং গবেষণার মান কেমন, জাতি গঠনে তার প্রভাব কী, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সামনের দিনগুলোয় আমাদের বহু কাজ করার আছে। মাননীয় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে এসেছি। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমি তাঁর ধীশক্তি লক্ষ করেছি। যখন যেখানে প্রয়োজন, তিনি সহযোগিতা করেছেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা এখনো প্রয়োগটা করতে পারিনি। এখন দরকার হচ্ছে, সেই কাজগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেওয়া। সামগ্রিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অন্য উচ্চতায় উপনীত করব।’

এই অনুষ্ঠানের পর সহকর্মীদের নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাকসুদ কামাল। গত ১৫ অক্টোবর ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সাময়িক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থী একজন শিক্ষকনেতা। সর্বশেষ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকবার নির্বাচিত হন তিনি। ডিন, প্রাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দলের আহ্বায়কের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। একজন গবেষক হিসেবেও প্রভাবশালী এই শিক্ষকের সুনাম রয়েছে। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন মাকসুদ কামাল।