ভারতে চাকরি হারাচ্ছেন ২১ হাজার মাদ্রাসাশিক্ষক

ভারতের উত্তর প্রদেশে চাকরি হারাচ্ছেন ২১ হাজার মাদ্রাসাশিক্ষকছবি: এএফপি

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ। এ রাজ্যের প্রায় ২১ হাজার মাদ্রাসাশিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসাশিক্ষকেরা এখন চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন।

ভারতের মাদ্রাসাগুলোয় মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৯-১০ সালে কংগ্রেস সরকার উত্তর প্রদেশে ‘স্কিম ফর প্রোভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন ইন মাদ্রাসাজ’ নামের একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করে। ২০১৬ সালে সেই প্রকল্পের তহবিলে আরও ৩০০ কোটি রুপি দিয়েছিল তৎকালীন বিজেপি সরকার। প্রকল্পটি চালু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত উত্তর প্রদেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৭০ হাজারের বেশি মাদ্রাসা। আসন্ন মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে মোদি সরকার মাদ্রাসাগুলোয় সেই অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উত্তর প্রদেশ সরকার গত বছরের এপ্রিল থেকে মাদ্রাসাশিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। চলতি মাসে পুরোপুরি বেতন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষক মূল বেতন পেতেন ১২ হাজার রুপি। বর্তমানে তা কমে তিন হাজার রুপিতে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন
২১ হাজারের বেশি শিক্ষক চাকরি হারাতে চলেছেন। এর ফলে মুসলিম ছাত্র ও শিক্ষকেরা ৩০ বছর পিছিয়ে পড়বেন।
ইফতিখার আহমেদ জাভেদ, উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান

এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অধীন মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হুমকি ও হয়রানি করছে। যদিও বিজেপি তা অস্বীকার করে আসছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পর্যালোচনা করা একটি নথি অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মার্চে মাদ্রাসাগুলোয় মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত এই কর্মসূচির আওতায় মোদি সরকার রাজ্যগুলোর নতুন কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করেনি। যদিও নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এ কর্মসূচির জন্য ৩ বিলিয়ন রুপি (৩৬ মিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর অফিস রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তবে একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাদ্রাসায় মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে ২০০৯ সালের বিনা মূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত আইনের সম্পর্ক থাকতে পারে। এই আইন শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করে এবং সব সরকারি স্কুলকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর অর্থ হলো, যেহেতু সরকারি স্কুলে শিশুদের শিক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই একটি আইন রয়েছে, সেখানে বিশেষত মাদ্রাসার জন্য আলাদা করে পৃথক কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজন পড়ে না।

আমাদের আর কোনো চাকরি নেই। আমার এখন যে বয়স, নতুন আরেকটি চাকরি খোঁজার জন্য তা উপযুক্ত নয়
সামিউল্লাহ খান, মাদ্রাসায় শিক্ষক
আরও পড়ুন

উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ বলেন, ২১ হাজারের বেশি শিক্ষক চাকরি হারাতে চলেছেন। এর ফলে মুসলিম ছাত্র ও শিক্ষকেরা ৩০ বছর পিছিয়ে পড়বেন।

সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–বিষয়ক সরকারি প্যানেলের সদস্য শহীদ আখতার বলেন, এই কর্মসূচি মুসলিম শিশুদের উপকার করেছে এবং এটি আবার চালু করা উচিত। তিনি বলেন, ‘এমনকি প্রধানমন্ত্রীও চান শিশুরা ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। এ প্রকল্প যাতে বহাল থাকে, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব আমি।’

আরও পড়ুন

নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান জাভেদ উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে প্রকল্পটির তহবিলে অর্থ বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

উত্তর প্রদেশ সরকার গত বছরের এপ্রিল থেকে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। চলতি মাসে পুরোপুরি বেতন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষক মূল বেতন পেতেন ১২ হাজার রুপি। বর্তমানে তা কমে তিন হাজার রুপিতে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন

১৪ বছর ধরে উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলার মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন সামিউল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর কোনো চাকরি নেই। আমার এখন যে বয়স, নতুন আরেকটি চাকরি খোঁজার জন্য তা উপযুক্ত নয়।’

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মুসলিমদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতের আসাম রাজ্যের শত শত মাদ্রাসাকে প্রচলিত স্কুলে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী পুরো রাজ্যকে মাদ্রাসায় অর্থায়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারতের অনেক মাদ্রাসা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুদানে পরিচালিত হয়। আর বাকিরা সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন