ফল সেমিস্টারের আগেই স্টুডেন্ট ভিসা সুরাহা করবে মার্কিন দূতাবাস

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।
ছবি: বাসস

ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তারা ফল সেশনের (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সেমিস্টার) আগে জমে থাকা বিপুলসংখ্যক ছাত্র ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী। এ জন্য কনস্যুলার বিভাগ গত শুক্রবার সপ্তাহান্তেও এ কাজে নিযুক্ত ছিল।

মার্কিন দূতাবাসের একজন কনস্যুলার কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেশনজট দূর করার জন্য সবকিছু করছি, দূতাবাস সত্যিই এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, কনস্যুলার বিভাগ সেপ্টেম্বর–ডিসেম্বর সেমিস্টার শুরুর আগে জমে থাকা ছাত্র ভিসার বিষয়টি সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী। কর্মকর্তাদের একটি দল শুধু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেপ্টেম্বর–ডিসেম্বর সেমিস্টারে যোগ দিতে ইচ্ছুক স্টুডেন্ট ভিসাপ্রক্রিয়ার কাজে নিযুক্ত আছেন।

মার্কিন দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগ কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অভিবাসী এবং অ-অভিবাসী উভয় ভিসা আবেদনে সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিশেষ করে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁদের ক্লাস করার জন্য ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।

কনস্যুলার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা ফল সেমিস্টার শুরুর আগে যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য শুক্রবার কাজ করেও বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতীকী ছবি

গত শুক্রবার একজন কনস্যুলার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি এই সেশনজট একজন শিক্ষার্থীর জন্য কতটা হতাশাজনক। তাই আমরা সেশনজট দূর করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি। এ কারণে আমরা শুক্রবারও কাজ করছি। এটি আমাদের জন্য একটি অগ্রাধিকারমূলক কাজ। আমরা সত্যিই নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা যতটা সম্ভব ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারি, যাতে শিক্ষার্থীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, গত শুক্রবার দূতাবাস ভিসার জন্য আবেদনকারী ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এ ধরনের ভিসার উচ্চ চাহিদা মেটাতে মিশনকে অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৯ জুলাই শুক্রবার আরেকটি ‘সুপার ফ্রাইডে’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন দূতাবাস মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের নির্ধারিত ক্লাস শুরুর আগে ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট পেতে ব্যর্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ দিচ্ছে।

আমি ভেবেছিলাম ভিসাপ্রক্রিয়াটি খুব জটিল হবে, কিন্তু আমি ভুল করছিলাম। বাস্তবে এটি সহজ হয়েছে।
জেরিন আলী, শিক্ষার্থী

মার্কিন দূতাবাসের কনসাল জেনারেল উইলিয়াম ডাওয়ারস ‘সুপার ফ্রাইডে’ উদ্যোগকে চিহ্নিত করে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের অফার করা অনন্য সুযোগকে আমরা স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমরা স্টুডেন্ট ভিসা ইন্টারভিউকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

আসন্ন সেমিস্টারে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে চান জেরিন আলী নামের একজন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্রী। তিনি বলেন, তিনি প্রথম ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ক্লাস চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শুরু হবে।

জেরিন আলী বলেন, ক্লাস শুরু হওয়ার আগে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। ১০ দিন পর ২২ জুলাই (শুক্রবার) নতুন সাক্ষাৎকারের তারিখ নিশ্চিত করে একটি ই-মেইল পেয়েছেন।

শুক্রবার ভিসা পাওয়ার পর কনস্যুলার বিভাগে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ভিসাপ্রক্রিয়াটি খুব জটিল হবে, কিন্তু আমি ভুল করছিলাম। বাস্তবে এটি সহজ হয়েছে।’

সুপার ফ্রাইডে জরুরি সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেয়েছেন শীতা বিশ্বাস নামের একজন পিএইচডির শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি জরুরি সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পেয়ে আনন্দিত, অন্যথায় আমার পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগদান করা সম্ভব হতো না।’ শীতা বিশ্বাস তাঁর স্বামী অনিক কুমারকে নির্ভরশীল হিসেবে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন।

মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে এবং বর্তমানে এই সংখ্যা বছরে সাড়ে আট হাজারের বেশি।

ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ওপেন ডোরসের ২০২১-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে সারা বিশ্ব থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ১৪তম স্থানে রয়েছে। যেখানে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে সূচকে দেশের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৭।

এদিকে মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। দুই শতাধিক দেশ থেকে ৯ লাখ ১৪ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে এই শিক্ষাবর্ষে।