সরকারের গবেষণা অনুদান পাচ্ছেন চুয়েটের ৪ শিক্ষক
৪টি পৃথক গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকার অনুদান পাচ্ছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ৪ শিক্ষক। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গবেষণা প্রকল্পের জন্য তাঁদের এ অনুদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুদান পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসলাম মিয়া, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এম কে মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার ও অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার সূত্রধর।
মো. ইসলাম মিয়া ও তাঁর গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানের গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে শিলাস্তরের বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে পানি ও গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এর মাধ্যমে হালনাগাদ মডেল গঠন করা হবে, যা ভূগর্ভে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করবে।
এম কে মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দারের নেতৃত্ব অনুদান পাওয়া অন্য একটি গবেষণা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো একধরনের তড়িৎ রাসায়নিক সেন্সর তৈরি করা, যেটি মানবদেহে এরিথ্রোমাইসিন নামক অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষুদ্র উপস্থিতি পরিমাপ করতে পারবে। ওষুধশিল্পে বহুত প্রচলিত একটি রাসায়নিকের নাম হলো এরিথ্রোমাইসিন।
অধ্যাপক জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘আমরা মূলত তড়িৎ রাসায়নিক সেন্সর প্রস্তুত নিয়েই কাজ করব, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ার পরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এমন কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিক উন্মোচন করবে।’
এ প্রজেক্টে সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন একই বিভাগের প্রভাষক সানজিদা মুকুট।
শিল্পায়নের এ যুগে নগরের শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলোর একটি অংশ রং এবং তার উচ্ছিষ্ট, যা বৃষ্টির পানি কিংবা কারখানার নিষ্কাশনপদ্ধতির মাধ্যমে নদীতে গিয়ে মিশে যায়। ব্যবহৃত রঙে ক্ষতিকর উপাদানগুলো দিন দিন নদীর পানিকে বিষাক্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী করে তোলে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। কারখানায় ব্যবহৃত রঙের এমন ক্ষতিকর উপাদানগুলো নদীর পানি থেকে দূরীকরণ ও তাদের প্রভাব প্রশমন করার জন্য ডাবল পেরোভস্কাইট ক্রোমিয়াম ফেরাস অক্সাইড নামের একধরনের রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করা হলে তা নদীর পানির সঙ্গে মিশে রঙের উপাদানগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পানিকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
এ গবেষণার প্রধান হিসেবে কাজ করছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী। সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন একই বিভাগের অধ্যাপক মো. মহি উদ্দিন।
গবেষণা অনুদানের জন্য নির্বাচিত হওয়া অন্য একটি দলের প্রধান গবেষক রঞ্জিত কুমার বলেন, ‘আমরা মূলত একধরনের হেটারো থায়াজোল বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করছি। হেটারো থায়াজোল এমন এক রাসায়নিক যৌগ, যেখানে বেনজিন যৌগে কার্বন পরমাণুর সঙ্গে সালফার ও নাইট্রোজেন যোগসাজশ ঘটবে। রাসায়নিকটি মূলত ওষুধশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এখানে শুরুতে আমরা ফিনাইল থায়াজোল প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। এরপর তার সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ করব।
এখানে সফল হওয়ার পর জীবদেহের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। মানবদেহের প্রভাব কেমন, রাসায়নিক ধর্মগুলো জানার মধ্য দিয়ে দেহ গঠনের উপাদান কোষ ও ক্ষুদ্রতম উপাদান প্রোটিনগুলোর সঙ্গের বিক্রিয়া জানতে এক ধাপ এগিয়ে যাব। সর্বোপরি এ রাসায়নিক কোনো ধর্ম বা মেকানিজম ব্যবহার করে বিক্রিয়াগুলো সংঘটিত করল, বাকি অন্য কোনো গঠনের রাসায়নিক দ্রব্য এমন বিক্রিয়া কেন দিল না, সেসবের কারণ উদ্ঘাটন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের প্রজেক্টে সফলতা ওষুধশিল্প ও চিকিৎসা খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
এ গবেষণায় সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করছেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম।
মোহাম্মদ ইসলাম মিয়া বলেন, ‘এ অনুদান আমাদের গবেষণা প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সহায়তা করবে। ওই গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণাক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চুয়েট গবেষণা খাতে আরও অগ্রগতির মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম বয়ে আনবে।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচির আওতায় ৬৯৬টি গবেষণা প্রকল্পকে অনুদান দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য গবেষণা অনুদান প্রদান করে আসছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।