চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সহ-উপাচার্য নিয়োগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত সহ-উপাচার্য মো. সেকান্দর চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. সেকান্দর চৌধুরী এ পদে আগামী চার বছর দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রশাসনিক পদে সহ-উপাচার্য তিনিই প্রথম। এর আগে কাউকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বেলা দুইটার দিকে তিনি দায়িত্ব নেন।

আরও পড়ুন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩–এর ১৪(১) ধারা অনুসারে অধ্যাপক মো. সেকান্দর চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) পদে নিয়োগ করা হলো।’

প্রজ্ঞাপনে সহ-উপাচার্য পদে মো. সেকান্দর চৌধুরীর নিয়োগে পাঁচটি শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হলো—

১. সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে তাঁর নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তিনি নিয়মিত চাকরির বয়সপূর্তিতে মূল পদে প্রত্যাবর্তনপূর্বক অবসর গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন শেষে উক্ত মেয়াদের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করবেন।

২. এই পদে তিনি বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতা পাবেন।

৩. বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।

৪. তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও আইন দ্বারা নির্ধারিত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

৫. রাষ্ট্রপতি বা আচার্য প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় নিয়োগ বাতিল করা যাবে।

অধ্যাপক মো. সেকান্দর চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে স্নাতক ও ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে ১৯৮৭ সালে প্রভাষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগ দেন। ২০০৪ সালে ওই বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে তিনি পদোন্নতি পান। এখন পর্যন্ত তিনি দুবার ডিন, দুবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সিনেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন হলুদ দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও পড়ুন

উপাচার্যের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে আলোচনা

নতুন সহ-উপাচার্য হলুদ দলের আহ্বায়ক হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দলের সঙ্গে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠজনদের বিরোধ নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। ডিন নির্বাচন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের সব জায়গাতেই হলুদ দলের বিপরীতে প্রার্থী দিয়েছেন উপাচার্য ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা। সেকান্দর চৌধুরী বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির পদে দায়িত্বে ছিলেন। এ পদ থেকে এক দিনের নোটিশে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উপাচার্য তাঁকে অপসরণ করেছিলেন। এর পর থেকে বিভক্তি প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এটি আরও প্রকট হয় গত বছরের ১৭ জানুয়ারি। ওই দিন শিক্ষক সমিতির দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেন। এর একটি পক্ষ মো. সেকান্দর চৌধুরীর নেতৃত্বধীন হলুদ দল ও আরেকটি পক্ষে উপাচার্য–ঘনিষ্ঠজনেরা ছিলেন।

পরে ওই মাসেই হলুদ দল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন উপাচার্য শিরীণ আখতারের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা। এরপর তাঁরা নিজেরাই আরেকটি হলুদ দল গঠন করেন। এখনো হলুদ দলের এ বিভক্তি রয়েছে। তবে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা শিক্ষক সমিতি ও ডিন নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমান শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতিসহ ১১ পদের ৭টিতেই মূল হলুদ দলের সদস্যরা রয়েছেন।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) বেনু কুমারদের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন করছে শিক্ষক সমিতি। ওই আন্দোলনের শুরুতেও নতুন সহ-উপাচার্য সেকান্দর চৌধুরী ছিলেন। তিনিও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পদত্যাগ চাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করবেন, এ বিষয় কীভাবে দেখছেন, তা জানতে চাইলে মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৯৭৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনের শাসনকে যথাযথভাবে প্রতিফলন করতে পারেনি। আমার যে অভিজ্ঞতা, তা দিয়ে আইনের শাসনের প্রতিফলন করতে চেষ্টা করব। যেসব জায়গায় অনিয়ম হয়, সেসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী হয়তো ভেবেছেন একাডেমিকের পাশাপাশি প্রশাসনিক একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে ভারসাম্য আসবে। আর যেহেতু তিনি এখন সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাই হলুদ দল কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে এখন মন্তব্য করবেন না।’