বঙ্গবন্ধুর ওপর জাপানি আর্ট গ্রাফিকস ‘মাঙ্গা’ উন্মোচন করা হলো

বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন নিয়ে জাপানি চিত্রকলার (গ্রাফিকস নোবেল জাপানিজ ‘মাঙ্গা’ ফর্মে) একটি কমিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু’ নামের বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বইটি যৌথভাবে লিখেছেন স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম এবং শাইন পার্টনারস করপোরেশন জাপানের প্রধান নির্বাহী ইয়েমতো কিয়েতা। বইটি প্রকাশ করেছে এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার্স লিমিটেড।

জাপানিদের কমিক ও কার্টুন ধাঁচের চিত্রকলার একটি ধরন হচ্ছে মাঙ্গা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রাম মাঙ্গা ফর্মে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বর্ণনা এবং ব্যতিক্রমী ছবিতে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের কথা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি। মূল প্রবন্ধ উপাস্থপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ফখরুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান রূপা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বইটিতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় অবদানের ফলে বাংলাদেশ যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, সে কথাও বলা হয়েছে। ব্যতিক্রমী বইটি পাঠ করে পাঠকেরা জানতে পারবে বাংলাদেশের কাহিনি এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ফখরুল আলম বলেন, বাংলা, ইংরেজি ও জাপানি—তিন ভাষায় বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। জাপানের জনপ্রিয় মাঙ্গা ফর্মে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই প্রকাশের ফলে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, মাঙ্গা ফর্মে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ বই একটি ঐতিহাসিক কাজ। বাংলা একাডেমি এ ধরনের বই প্রকাশের উদ্যোগ নেবে।

ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, জাপান আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের জন্ম থেকে জাপান আমাদের উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে। তাই জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে জনপ্রিয় মাঙ্গা ফর্মে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এটা অত্যন্ত অর্থবহ ও শিক্ষণীয় যে শিশুরা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কাহিনি মাঙ্গার মাধ্যমে জানতে পারবে। ইংরেজি, বাংলা, এমনকি জাপানি ভাষায় বইটির প্রকাশনা জাপানি শিশুদেরও জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এ উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে জাপানিদের ধারণা আরও গভীর করবে। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে জাপানের স্বীকৃতি প্রদান এ প্রকাশনার উপলক্ষ।

১৯৭৩ সালের ১৪ থেকে ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ১৬ বছর বয়সী কন্যা শেখ রেহানা ও কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। জাপান পৌঁছানোর দিন যার বয়স ১০ বছর পূর্ণ হয়। বঙ্গবন্ধুর সফরের সময় জাপানের জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার অপরিহার্যতাকে প্রবলভাবে সমর্থন করেন। ১৯৪৫ সালের নিজেদের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তাঁরা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে প্রদত্ত ব্যাঙ্কোয়েটে তখনকার জাপানি প্রধানমন্ত্রী তানাকা কাকুই ব্যক্তিগতভাবে ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এভাবেই জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠল। বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের দ্বার উন্মোচন করলেন।

তাঁর সূদরপ্রসারী লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমরা যমুনা সেতুসহ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছি। জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ প্রকাশনা নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করল।

স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’ বইটিতে আমরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে তুলে ধরেছি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষ্যে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। বইটির পাঠক শিশু-কিশোর, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেবে সাফল্যের ও উন্নতির স্বর্ণশিখরে। জাপানি মাঙ্গা ভঙ্গিতে লিখিত ও অঙ্কিত পাঁচ পর্বের উল্লেখ্য গ্রন্থের প্রথম পর্ব এ বই। বইটির প্রথম পর্ব নিয়ে এ বছরই অ্যানিমেশন মুভি তৈরি করা হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র জাপান। বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের ৫০ বছরের (১৯৭২-২০২২) প্রকাশনা এ বইতে দুই দেশের দুজন লেখকের বঙ্গবন্ধু বিষয়ে ভাবনাকে যূথবদ্ধ করা হয়েছে।

জাপানি আর্ট ফর্ম ‘মাঙ্গা’ সম্পর্কে

জাপানিদের কমিক ও কার্টুন ধাঁচের চিত্রকলার একটি ফর্ম হচ্ছে ‘মাঙ্গা’। এটি ‘রিয়েলিস্টিক’ ফর্ম নয়, এমনকি এর সঙ্গে পাশ্চাত্যধারার অন্য কোনো ফর্মের সম্পৃক্ততাও নেই।

অত্যন্ত জনপ্রিয় এ ফর্ম ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে জাপানি চিত্র ও প্রকাশনা শিল্পে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। অভিযান কাহিনি থেকে ফ্যান্টাসি, শিশুপাঠ থেকে বরণীয় ব্যক্তিত্বের জীবনী, লোককথা থেকে শুরু করে আধুনিক বাস্তব ও পরাবাস্তববাদী উপন্যাস, ইতিহাস থেকে শুরু করে রোমাঞ্চ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে শুরু করে রহস্যভেদী কাহিনি—সবই অল্প কথায় এবং অসনাতন ছবিতে মাঙ্গায় মূর্ত হয়ে থাকে। ‘ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু’ বইটি মাঙ্গা ফর্মে প্রকাশের মধ্য দিয়ে চিত্রশিল্পের এ ফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশও পরিচিত হলো।