শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হচ্ছে, শাখা ক্যাম্পাস হবে আলাদা প্রতিষ্ঠান

  • আগামী বছর থেকে বিদ্যালয়ের শুরুর ক্লাসে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হবে

  • দ্বিতীয় পালার শিক্ষকদের নতুন করে এমপিওভুক্ত করা যাবে না

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দ্বিতীয় পালায় নতুন করে শ্রেণি শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়া যাবে না

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাসগুলো আলাদা প্রতিষ্ঠান

বর্তমানে সারা দেশে মোট ৪৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই পালায় চলে
ফাইল ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দুই পালা (ডাবল শিফট) বন্ধ হচ্ছে। আগামী বছর থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে পাঁচ বছরের মধ্যে সব শ্রেণিতেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস চালুর সুযোগও বন্ধ হচ্ছে। যেগুলোতে শাখা ক্যাম্পাস আছে, সেগুলো আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে। এ জন্য এগুলোকে আলাদা পরিচিতি নম্বর (ইআইআইএন) দেওয়া হবে।

২১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় পালায় চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পর্যাপ্ত সময় নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে মোট ৪৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই পালায় চলে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী সাড়ে ৭ লাখের মতো। এর মধ্যে ১৬৫টি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ। এ রকম এমপিওভুক্ত (মূল বেতনসহ কিছু ভাতা সরকার থেকে পায়, যা ‘মান্থলি পে–অর্ডার’ বলে পরিচিত) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২২২টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৮৫ হাজারের মতো। আর এমপিওভুক্ত নয়, এমন ৭৮টি প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা চলে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী আছে ৯৬ হাজারের বেশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
ফাইল ছবি
আরও পড়ুন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা থাকবে না। আগামী বছর (২০২৫) থেকে বিদ্যালয়ের শুরুর ক্লাসে (এন্ট্রি পর্যায়) দ্বিতীয় পালায় শিক্ষার্থী বন্ধ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পাঁচ বছরের মধ্যে সব শ্রেণিতে তা কার্যকর হবে। আর পুরোপুরি এক পালা চালুর আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দ্বিতীয় পালার শিক্ষকদের নতুন করে এমপিওভুক্ত করা যাবে না। দ্বিতীয় পালার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমন্বয় করে কাজে নিয়োজিত রাখার কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় পালায় চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বিতীয় পালায় নতুন করে শ্রেণি শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়া যাবে না।

প্রথম আলো ফাইল ছবি
আরও পড়ুন

দ্বিতীয় পালা বন্ধ করলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক প্রথম আলোকে, যেহেতু ধাপে ধাপে এটি হচ্ছে, সুতরাং প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মনে করেন।

শাখা ক্যাম্পাস থাকবে না

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বন্ধেরও সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাখা ক্যাম্পাস বা ব্র্যাঞ্চ রয়েছে, সেগুলোকে শিক্ষা বোর্ড পৃথক ইআইআইএন নম্বর দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (ব্যানবেইস) তথ্য দেবে। নতুন ইআইআইএন পাওয়া ক্যাম্পাসগুলো আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঠদানের অনুমোদন দেবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা পরিচালনা কমিটি গঠনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এর মানে হলো ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল বা মনিপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে একাধিক শাখা ক্যাম্পাস চালু রয়েছে, সেসব শাখাও হবে একেকটি স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানও হবেন আলাদা।

বর্তমানে একই পরিচালনা কমিটির অধীনে চলে শাখা ক্যাম্পাস। প্রতিটি শাখার জন্য একজন করে শাখাপ্রধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানপ্রধান একজনই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো ফাইল ছবি
দুটি সিদ্ধান্তই ভালো। কারণ, শাখা ক্যাম্পাসগুলো কার্যত বেআইনি। বিদ্যমান আইনে এর সুযোগও নেই। দ্বিতীয় পালার কারণেও শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। এই সময়েরে মধ্যে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালাতেও অসুবিধা হয়
অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান

বিদ্যমান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার অনুমোদিত মূল ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোথাও শাখা খুলতে পারবে না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় চাহিদা, উপযুক্ততা এবং প্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত ও নামজারি করা নিজস্ব জমি থাকলে ওই জমিতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন শাখা খোলার বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিবেচনা করতে পারবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন বিদ্যমান নীতিমালাটির এই অংশ সংশোধন হবে।

দ্বিতীয় পালা চলা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীসংখ্যা সরকারি প্রতিষ্ঠান ১৬৫টি, শিক্ষার্থী ২,৭০,২১৭ জন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ২২২টি, শিক্ষার্থী ৩,৮৫,০১০ জন নন–এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ৭৮টি, শিক্ষার্থী ৯৬,২১৪ জন।

শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বন্ধের এই পরিকল্পনা বেশ কিছু দিন আগেই নেওয়া হয়েছিল। এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মতে দুটি সিদ্ধান্তই ভালো। কারণ, শাখা ক্যাম্পাসগুলো কার্যত বেআইনি। বিদ্যমান আইনে এর সুযোগও নেই। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এসব শাখা ক্যাম্পাসকে আলাদা প্রতিষ্ঠান করার কথা বলে আসছিলেন। আর দ্বিতীয় পালার কারণেও শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। এই সময়েরে মধ্যে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালাতেও অসুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেহেতু পর্যাপ্ত আছে, তাই ভর্তিতেও খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানোন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে।