উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত, বেতন কম, কারিগরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা পড়ে আছে।

দেশের কারিগরি শিক্ষা যতটা শিক্ষার্থী পাওয়ার কথা, ততটা পাচ্ছে না। দেশে সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন আছে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৬৯ হাজার শিক্ষার্থী, অর্থাৎ এক লাখের বেশি আসন ফাঁকা আছে। এর অধিকাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। আসন ফাঁকা আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানেও।

এ ছাড়া এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসিতেও (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বা বিএম) বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা আছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কারিগরি শিক্ষার মূল কোর্সগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। যদিও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। অবশ্য সব ধরনের কোর্স মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যেভাবে কথা হয়, সেভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক শিক্ষা পান না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাবরেটরি ও শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী নয়। দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব আছে। এতে কারিগরি শিক্ষার মানে ঘাটতি থাকছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগও কম। আবার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছে না দেশের কারিগরি শিক্ষা। এ কারণে পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সহজে চাকরি পেলেও বেতন-ভাতা খুবই কম পান।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, করোনা–পরবর্তী পরিস্থিতির একটি প্রভাব পড়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, আবার উপার্জনের সুযোগও কমেছে। অনেক কলকারখানার পরিস্থিতি নিম্নগামী। বর্তমানে যুবসমাজের অনেকেই স্বল্পমেয়াদি কোর্স করে কর্মে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তাঁরা ছোট ছোট পেশায় যেতে আগ্রহী। এসব কারণে অনেক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীসংকটে ভুগছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার তথ্য বলছে, এসব শিক্ষার্থী চাকরি পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুতে বেতন পাচ্ছেন ১০ হাজার টাকার নিচে।

শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতেই হবে। সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তিন স্তরের কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে আছে দুই বছর মেয়াদি এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দুই বছর মেয়াদি এইচএসসি (ভোকেশনাল) এবং চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থাও আছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কারিগরি শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত, এখানে কাঠামোগত সংস্কার দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রেডভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও নতুন প্রযুক্তির অভাব আছে। এসব দূর করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আরও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষা নিয়েও অনেকে বেকার, তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, এর বিকল্প হিসেবে কারিগরি শিক্ষায় জোর দিতে হবে। মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার। কারণ, কারিগরি শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এ শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে মিস্ত্রি বানানোর কারখানা। এ ধরনের নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চার বছর মেয়াদি ১০ ধরনের ডিপ্লোমা কোর্স চালু আছে। এগুলো হলো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা ইন লাইভস্টক, ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (নেভাল), ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (আর্মি) ও ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ৩২টি ট্রেডে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ আছে। অবশ্য সব প্রতিষ্ঠানে সব ট্রেড নেই। মূলত এসএসসি পাসের পর চার বছর মেয়াদি এসব কোর্সে ভর্তি করা হয়। দেশে ৫৬টি সরকারি ও ৫৭২টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এসব কোর্সে পড়ানো হয়।

করোনা–পরবর্তী পরিস্থিতির একটি প্রভাব পড়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, আবার উপার্জনের সুযোগও কমেছে। অনেক কলকারখানার পরিস্থিতি নিম্নগামী। বর্তমানে যুবসমাজের অনেকেই স্বল্পমেয়াদি কোর্স করে কর্মে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তাঁরা ছোট ছোট পেশায় যেতে আগ্রহী। এসব কারণে অনেক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীসংকটে ভুগছে।
প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৪৩ হাজার ৫০০। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে অর্থ বছর ধরে তথ্য দেওয়া হয়েছে) সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ৬৪৪ জন শিক্ষার্থী, অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় পাঁচ হাজার আসন ফাঁকা। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী। এর পরের বছর ছিল ৪৪ হাজারের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪৩ হাজার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৫০০। এর মানে হলো পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়েছে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয়।

বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে আসন আছে ১ লাখ ২৮ হাজার। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব আসনের বিপরীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ১৩৬। এর মানে বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রায় এক লাখ আসন ফাঁকা। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতেও পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কারিগরি শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত, এখানে কাঠামোগত সংস্কার দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রেডভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও নতুন প্রযুক্তির অভাব আছে। এসব দূর করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আরও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আটটি ট্রেড আছে। ১৮টি সরকারি ও ২১৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কোর্সে শিক্ষা দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৯৯ জন। এখানেও পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

ভোকেশনালে আগে নবম শ্রেণি থেকে পড়াশোনা শুরু হতো। কিন্তু এখন ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ভোকেশনালে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে এসব কোর্সে পড়ানো হয়। এসএসসিতে (ভোকেশনাল) আসন আছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৮৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এ তথ্য বলছে, বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা থাকছে।

অভিযোগ আছে, ঢালাওভাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমোদন দেওয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মান বেশ খারাপ।

৫ মে আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সামনে ময়মনসিংহ থেকে আসা একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এ রকম একটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি একটি বেসরকারি টেক্সটাইল অ্যান্ড পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তেমন পড়াশোনা হয় না। ক্লাসে হাতে গোনা শিক্ষার্থী থাকতেন। এ পরিস্থিতিতে ওই প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাতিল করে ময়মনসিংহ শহরে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। এতে তিনি প্রায় দুই সেমিস্টারে পিছিয়ে পড়লেন। আবার টাকাও অপচয় হলো।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও গবেষণা থেকে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে একটি বড় বাধা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। এ কারণে কারিগরি শিক্ষায় ভালো মানের শিক্ষার্থীরা আসতে চান না। আবার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ক্লাসে উপস্থিতির ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।

সংকট ও চ্যালেঞ্জ

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বর্তমানে স্থাপত্য, অটোমোবাইল, সিভিল, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, ফুড, কেমিক্যাল, এনভায়রনমেন্টাল, এয়ারকন্ডিশন, পাওয়ার ও অটোমোবাইল টেকনোলজিসহ ১২টি টেকনোলজিতে পড়াশোনা করানো হয়। এসব টেকনোলজিতে প্রায় ১০ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীকে ১০৮ গ্রুপে ভাগ করে ক্লাস করানো হয়।

তবে ৭ মে সরেজমিনে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধ দেখা যায়। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে এ বন্ধ। ফটকের সামনে আন্দোলন-সংক্রান্ত দেয়াললিখনের সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা কতগুলো অভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাও বলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের শিক্ষাক্রম বেশ পুরোনো। এখন নতুন প্রযুক্তি এসেছে, কিন্তু সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন হয়নি। ব্যবহারিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে, যন্ত্রপাতির সংকট আছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি আছে, কিন্তু ব্যবহৃত হয় না। যাঁরা এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কেউ কেউ সে বিষয়ে দক্ষ নন। এসব কারণে বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডিপ্লোমা পাস করা অর্ধেকের বেশি (৫১ দশমিক ৭ শতাংশ) শিক্ষার্থী সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও খাতে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত। তবে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার। প্রায় ৭ শতাংশ স্নাতক স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

পাওয়ার টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র মো. শেখ খালিদ বিন ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের চাওয়া হলো নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষাক্রমকে যুগোপযোগী করা এবং ল্যাবরেটরিগুলো আধুনিক করে কার্যকরভাবে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও গবেষণা থেকে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে একটি বড় বাধা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। এ কারণে কারিগরি শিক্ষায় ভালো মানের শিক্ষার্থীরা আসতে চান না। আবার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ক্লাসে উপস্থিতির ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ভর্তির সময় পরীক্ষার মাধ্যমে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া উপস্থিতির বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন, চাকরিতে বেতন কম

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় সংলাপের আয়োজন করেছিল। এ নিয়ে সমীক্ষাও করেছে সংস্থাটি। এসব সংলাপ ও সমীক্ষার মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার কিছু সমস্যা ও করণীয় বের করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সংলাপে যে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়, তাতে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বর্তমানে ঝরে পড়ার হার বেড়ে ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা আগে ছিল ২৯ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত যে ধরনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়, তার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শিক্ষা গ্রহণের পর মোটামুটি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে চাকরি পাওয়া গেছে বলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। যদিও চাকরির বেতনের বিষয়ে অসন্তোষ আছে। জরিপে অংশ নেওয়া একটি বড় অংশ জানিয়েছেন, কারিগরি শিক্ষাগ্রহণকারীরা মাসে ১০ হাজার টাকার নিচে আয় করেন।

সাতক্ষীরা সংলাপে যে সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতেও একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যদি ভালো আয়ের কর্মসংস্থান না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যেতে পারে।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৭ মে বলেন, তিনি ৬ মে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে শুরুতে বেতন আনুমানিক ১২ হাজার টাকার মতো।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডিপ্লোমা পাস করা অর্ধেকের বেশি (৫১ দশমিক ৭ শতাংশ) শিক্ষার্থী সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও খাতে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত। তবে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার। প্রায় ৭ শতাংশ স্নাতক স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু মান উন্নয়ন না করলে সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।

এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বর্তমানে নতুন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক আছেন। পাশাপাশি এখন তাঁরা সব তথ্য সংগ্রহ করছেন। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বাতিল করারও চিন্তা করছেন।