কর্মঘণ্টায় সীমাবদ্ধতায় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে দরকার কর্মব্যাপ্তিতে মুখরিত গবেষণা পরিবেশ

প্রতীকী ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সপ্তাহে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে কত ঘণ্টা কাজ করবেন, তা নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা, ২০২২ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে (প্রথম আলো, ২২ আগস্ট ২০২২)। ইউজিসি মনে করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণাকাজ ঠিকমতো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক অপরিহার্য। আর সে জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং লোড ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে জনবল অনুমোদন দিতে শিক্ষকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার।

প্রস্তাবিত নির্দেশনা অনুযায়ী সপ্তাহে একজন শিক্ষকের মোট কর্মঘণ্টা হবে ৪০। সাপ্তাহিক এ ৪০ কর্মঘণ্টার কাজ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে কন্টাক্ট আওয়ার আর আরেকটি হচ্ছে নন-কন্টাক্ট আওয়ার। একজন শিক্ষকের কন্টাক্ট আওয়ার হবে পদভিত্তিক; যেখানে গড় কর্মঘণ্টা হবে ১৩। এ কর্মঘণ্টায় একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সুপারিশে কোর্সগুলোর জন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাবেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য প্রতি কোর্সে সপ্তাহে এক ঘণ্টা ব্যয় করবেন।

বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আরও জানা যায়, কন্টাক্ট আওয়ার বলতে সরাসরি ক্লাসরুমে পাঠদান, টিউটোরিয়াল-সেশনাল-সেমিনার পরিচালনা, ল্যাবরেটরিতে শিক্ষার্থীদের গাইড করা, প্রজেক্ট-ইন্টারশিপ-থিসিস সুপারভিশনকে বোঝায়। অন্যদিকে, নন-কন্টাক্ট আওয়ারে শিক্ষক ২৭ ঘণ্টা কাজ করবেন প্রধানত ১৩টি ক্ষেত্রে। এগুলো হচ্ছে কোর্স ম্যাটেরিয়াল প্রস্তুত, পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, মৌখিক পরীক্ষা বা থিসিস উপস্থাপনায় অংশগ্রহণ, শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং, গবেষণা, ল্যাবরেটরি ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ, বই বা প্রবন্ধ লেখা এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা। প্রশাসনিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য যেহেতু পদোন্নতিতে নম্বর যুক্ত হয়, এ জন্য এটি কন্টাক্ট বা নন-কন্টাক্ট কোনো আওয়ারের মধ্যেই গণনা করা হবে না। এ কাজের মধ্যে আছে বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরশিপ ইত্যাদি।

ছবি: প্রতীকী

বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে শিক্ষকদের কর্মঘণ্টার যথাযথ বাস্তবায়নে ইউজিসি যে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ভাবছে, আমরা সে প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বর্তমানে প্রস্তাবিত কর্মঘণ্টা শিক্ষার প্রকৃত মান উন্নয়নে কতটুকু সহায়ক হবে, সে বিষয়ে কিছু পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

১.

নতুন নীতিমালায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে এক ঘণ্টা কাউন্সেলিংয়ের জন্য রাখা হয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সাপ্তাহিক এ সময়কে এক ঘণ্টার পরিবর্তে কমপক্ষে বাধ্যতামূলক দুই ঘণ্টা এবং ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রয়োজনে আরও দুই ঘণ্টা রাখা যেতে পারে। এ সেশনে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক কারিকুলাম অথবা ক্যারিয়ার প্ল্যানসহ বিভিন্ন বিষয় ব্যক্তিগতভাবে আলাদা করে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দিকনির্দেশনা পেতে পারে।

নতুন নীতিমালায় শিক্ষকদের কর্মঘণ্টা সম্পর্কে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কন্টাক্ট আওয়ারের পরিধি একজন শিক্ষকের বিপরীতে কতজন শিক্ষার্থী হতে পারে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। যেমন ৩০ জনের একটি ক্লাস বনাম ১০০ জনের একটি থিওরি ক্লাস কখনো এক নয়। অতএব প্রতিটি ক্লাসের জন্য শিক্ষকপ্রতি একটি আদর্শ শিক্ষার্থীসংখ্যা বিবেচনাপূর্বক কন্টাক্ট আওয়ার নির্ধারণ করা আবশ্যক। এতে ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন একজন শিক্ষক। মনে রাখা দরকার, মূল্যায়নজনিত সুচিন্তিত মতামত শিক্ষার্থীদের খুবই প্রয়োজন।

৩.

প্রায় সব দেশেই প্রতিটি কোর্সের জন্য টিচিং সহকারী (টিএ) থাকে, যারা ওই কোর্সেও সহায়ক হিসেবে শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে। বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীর একটি ক্লাসে বেশিসংখ্যক টিএ থাকতে পারে। টিএ বৃত্তি চালুকরণরে মাধ্যমে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক চর্চাকে অনুপ্রাণিত করতে পারি।
বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষকের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বৈধতা দিয়ে থাকে। সক্রিয় রাজনীতিচর্চা আর একাডেমিক চর্চা একসঙ্গে চলতে পারে না; তা অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যাপকদের একাডেমিক কর্মব্যাপ্তিতেই দেখা যায়; যদিও তাঁরা গবেষণার মাধ্যমে তাঁদের বক্তব্য কিংবা চিন্তার দর্শন উপস্থাপন পারেন। একজন শিক্ষক যখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৪০ কর্মঘণ্টা কীভাবে মেনে চলা সম্ভব হবে, এ বিষয়ও প্রস্তাবিত নীতিমালায় সুস্পষ্ট নয়।

আমরা কেন একাডেমিক ক্যালেন্ডার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারছি না—এ সমস্যার কারণ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হবে। অনেকটা চিরস্থায়ী এ সমস্যার মূল কারণ শনাক্ত করে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে সরকারকে সুস্পষ্টভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ইউজিসি একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।

৪.

শোনা যাচ্ছে, প্রভাষক কিংবা সহকারী অধ্যাপকদের ক্লাসলোড তুলনামূলক বেশি থাকবে, কারণ তাঁরা সাধারণত থিসিস মূল্যায়নের সঙ্গে সরাসরি সক্রিয় থাকেন না। এটা তো সাদাচোখে দেখা একটি ফলাফল। যেকোনো কার্যের ফলাফল বিবেচনায় সংস্কার না করে তার সঠিক কারণ নির্ণয় করা ও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দেখা যায়, পিএইচডিধারীই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পিএইচডির সময় তাঁরা উচ্চশিক্ষার গবেষণা কিংবা শিক্ষাদানের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, আমাদের দেশে তা হয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়া কিংবা তাঁদের উপযোগী আর্থিক সুবিধা না দেওয়া একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অনেক সময় ধরে বিবেচিত হলেও এ ব্যাপারে ইউজিসির কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না।

আর যদি বর্তমান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বহাল থাকে, তাহলে পিএইচডিবিহীন শিক্ষকেরা উচ্চশিক্ষা তথা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য প্রস্তুতি কিংবা গবেষণাকাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকবেন, তখন তাঁদের বেশি ক্লাসলোড দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক, তা-ও বিবেচনায় আনতে হবে।

দ্বিমুখী এ সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের সমস্যার সঠিক কারণ উদ্‌ঘাটন এবং এর বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

প্রতীকী ছবি

৫.

প্রস্তাবিত নীতিমালায় নন-কন্টাক্ট আওয়ারে গবেষণাসহ অন্যান্য খাত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মূল কাজ গবেষণা ও শিক্ষাদান। তিনি গবেষণার মাধ্যমে সমাজের মূল সমস্যা শনাক্ত করবেন এবং এর সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তাব করবেন। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের এ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে সমাজে ব্যবহার সম্পর্কে শিখবে।

একটি মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করতে অনেক সময় গবেষককে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়। আবার মানসিক ভাবনার এ কাজ সমাজের অন্যান্য কাজের মতো দৃশ্যমান নয়। একটি গবেষণা সমস্যা শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে মেথড বা প্রটোকল তৈরি করে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা যায়। এটা করতে অনেক গবেষককে সারা দিনই কাজ করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ২৭ ঘণ্টা কর্মপরিধির বাইরেও ওই গবেষক–শিক্ষককে কাজ করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে একজন গবেষক–শিক্ষক কীভাবে মূল্যায়িত হবেন, বর্তমানে নীতিমালায় তা সুস্পষ্ট নয়। মনে রাখা দরকার, সঠিক মূল্যায়ন ব্যতীত সৃজনশীল কাজ বেশি দিন করা যায় না।

৬.

অধিকন্তু, ওই গবেষণাকর্ম একাডেমিক জার্নালে প্রকাশের জন্য সাবমিশন ফি প্রয়োজন, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ ইউএস ডলারের অধিক (https://www.elsevier.com/journals/journal-of-monetary-economics/0304-3932/guide-for-authors)। মৌলিক গবেষণাকর্ম প্রথম পাঠানো একটি জার্নালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রিজেক্ট হয়ে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের রিভিউয়ার কমেন্ট সংযোজন সাপেক্ষে পরবর্তী কয়েকবার একইভাবে সাবমিশন ফি দিয়ে পাঠানো কিংবা আরও গবেষণার মধ্যমে অন্য কোনো একটি জার্নালে ওই গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় উদাহরণ হিসেবে প্রভাষক-শিক্ষকদের মূল বেতন ২২ হাজার টাকার ৫০ শতাংশই জার্নালে সাবমিশন ফির জন্য দিতে হয়। বর্তমান নীতিমালায় ইউজিসি কীভাবে ওই গবেষকের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কিংবা আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে তাঁকে উৎসাহিত করবে, তা সুস্পষ্ট নয়।

৭.

অনেক শিক্ষক-গবেষক আছেন, যাঁরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে রিভিউয়ার হিসেবে কাজ করছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ড মেম্বার হিসেবে কাজ করছেন। বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ কিছু কিছু শিক্ষক অনেক কর্মঘণ্টার বিনিময়ে নিরলসভাবে করে চলছেন। তাঁদের এই মূল্যবান কাজ বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশকে বিশ্বের সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে পরিচিত করছে। ইউজিসির প্রস্তাবিত নীতিমালায় সত্যিকারের এ শিক্ষক-গবেষকদের কীভাবে মূল্যায়িত করবে, তা সুস্পষ্ট নয়।

৮.

সত্যিকারের একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক গবেষণার পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত হয়েই নিজেকে প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করেন। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের জোগান দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরই বর্তায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক হিসেবে এ ক্ষেত্রে ইউজিসি আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের জন্য সব একাডেমিক পাবলিকেশনের সরাসরি সাবস্ক্রিপশন, তথ্য-উপাত্ত, গবেষণার উপকরণ, ভালো মানের জার্নালে পাবলিকেশনের জন্য প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে ইউজিসি শিক্ষকদের গবেষণামুখী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে।

৯.

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের প্রধানতম কাজ হচ্ছে অধ্যয়ন করা, তেমনিভাবে শিক্ষকের প্রধানতম কাজ হচ্ছে প্রণোদিত হয়ে বিশ্বের সায়েন্টিফিক কমিউনিটির সঙ্গে সঙ্গে নিজের কর্মদক্ষতা উন্নত করা এবং সেই জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা। এ কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করার নৈতিক দায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি, কারণ তাঁরা জনগণের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন। ছাত্র-শিক্ষকের অধ্যয়নসম্পর্কিত প্রধান এ কাজের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সক্রিয় রাজনীতিচর্চাকে দায়ী করেন। এর সঠিক কারণ শনাক্ত করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার ভার ইউজিসিরই।

১০.

ইউজিসি প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে প্রতিবছর গবেষণা ও শিক্ষাদানপদ্ধতির মূল্যায়নসম্পর্কিত একটি ন্যূনতম মানদণ্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের মূল্যায়ন চালু করা যেতে পারে, যেখানে শুধু একাডেমিক মূল্যায়ন হবে। এখানে বলে রাখা ভালো, বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় রাজনীতি চালু থাকলে শিক্ষকদের মূল্যায়ন পক্ষপাতমূলক হতে পারে। কারণ, এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নন-একাডেমিক বিষয় জড়িত হতে পারে।

একই সঙ্গে সব অধ্যাপকের বাধ্যতামূলক বার্ষিক গবেষণা নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন প্রত্যেকের প্রতি দুই বছরে একটি কিউ-১ জার্নাল পাবলিকেশন এবং প্রতিবছর কমপক্ষে একটি কনফারেন্স পেপার উপস্থাপন করা, যদিও ন্যূনতম সংখ্যা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।

এভাবে অধ্যাপকদের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে বিভাগের সব শিক্ষক গবেষণাকাজে নিয়োজিত থাকতে পারেন। তাহলে শিক্ষা ও গবেষণামুখী এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের ৪০ ঘণ্টা নয়, আরও অনেক বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করবে।

ছবি: লেখক

অতএব, বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের কর্মঘণ্টায় ফোকাস না করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকারের একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে শিক্ষকদের আপডেট করা, ছাত্র পড়ানো কিংবা গবেষণায় সক্রিয়ভাবে কীভাবে নিয়োজিত করা যায়, তা-ই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। আর সে জন্য বলা যায়, সত্যিকারের একজন গবেষক-শিক্ষকের জন্য ৪০ কর্মঘণ্টা তাঁর সার্বিক কর্মপরিধির তুলনায় অনেক কম। সে জন্য আমরা মনে করি, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে নয়, সত্যিকারের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের ৪০ ঘণ্টার চেয়েও বেশি একাডেমিক কাজ করাতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহারে ইউজিসি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে একাডেমিক কর্মব্যাপ্তি বিবেচনায় সংস্কার করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক: ড. মুহাম্মদ আবদুর রহমান ফরহাদ, সহযোগী অধ্যাপক (অর্থনীতি), ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর