২০১৪ সালে বোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রকাশ চন্দ্র রায়। তখন তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র। সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল তাঁর। থেমে গিয়েছিল খেলাধুলা, আড্ডা, পড়াশোনা। কিন্তু দমে যাননি। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন পড়াশোনার জগতে। এখন চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান। সে জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রকাশ চন্দ্র রায় এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যাবতীয় তথ্য সাজিয়ে মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে এডুকেশনইউএসএ প্ল্যাটফর্ম।
মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রকাশ চন্দ্র রায়। ক্যানসারের কারণে তাঁর এক পা কেটে ফেলে দিতে হয়েছিল ২০২০ সালে। স্ট্রেচারে ভর দিয়ে তিনি ঘুরেছেন এ স্টল থেকে ও স্টলে। প্রকাশ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা হয়। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নেবেন। ভর্তি নিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস চট্টগ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো এই মেলার আয়োজন করল। এর আগে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য নিয়ে মেলার আয়োজন হয়। কিন্তু আজকের মেলায় শিক্ষার্থীদের ঢল নেমেছিল। চট্টগ্রামের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী মেলায় অংশ নেন। রেডিসনের মেজবান হল থেকে লাইন চলে গিয়েছিল একদম মূল সড়ক পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় মেলা শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মেলায় তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শিক্ষার্থীরা হাজির জন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টলগুলোতে গিয়ে ভর্তির নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। কীভাবে আবেদন করতে হবে, আবেদনের যোগ্যতা কী, স্নাতকে ফলাফল কী লাগবে, গবেষণা প্রবন্ধ লাগবে কি না, বৃত্তি পাওয়া যাবে কি না-এসব প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিরা।
মেলায় এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী উসাহ্লা মারমা, খিং সাইনু মারমা ও নু সাই মং। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা ও গবেষণা করছেন, এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত কথা হয়। সেখানে পড়াশোনার মান ভালো। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চান তাঁরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষা মেলায় যুক্তরাষ্ট্রের মোট ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি, এম্পোরিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, লুইসিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি, ওল্ড ডমিনিয়ন ইউনিভার্সিটি, ট্রয় ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ হেভেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি কর্মকর্তা স্টিভেন ইবেলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিকমানের। পড়াশোনা ও গবেষণায় অনন্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর দেশের অনেক শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরাও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য আগ্রহী। এ কারণে দ্বিতীয়বারের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছেন। স্টলে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করছেন। স্টিভেন ইবেলি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সহযোগিতায় নিজেদের প্রতিভাকে উন্মোচন করতে পারেন।
মেলায় কথা হয় বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাতেমা জহুরা ও তাঁর স্বামী সাঈদুজ্জমান চৌধুরীর সঙ্গে। ফাতেমা পড়ছেন ফার্মাসি বিভাগে। আর সাঈদুজ্জামান মনোবিজ্ঞানে। তাঁরা বলেন, তাঁর বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। এ কারণে সেখানে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জ্যোতি ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয় জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টলের সামনে। জ্যোতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার পরিকল্পনা করেছি। ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা তথ্য জোগাড় করেছি। মেলায় এসে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর সহজে পাওয়া গেছে। কীভাবে, কখন আবেদন করতে হবে, আবেদনের শর্ত কী কী, কত টাকা খরচ হবে-এসব তথ্য জানতে পেরেছি।’
আয়োজকেরা জানান, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৩ হাজার ৩১৪ জন। সেখান থেকে বেড়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯৭ জনে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত শিক্ষাবর্ষে ১৪তম ছিল। এখন এক ধাপ এগিয়ে ১৩তম হয়েছে।