উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথমবারের মতো চালু হলো অক্সফোর্ড একিউএ প্রি-স্কুল প্রোগ্রাম

উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘অক্সফোর্ড একিউএ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

দেশে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গবেষণাভিত্তিক অক্সফোর্ড অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিফিকেশনস অ্যালায়েন্স (একিউএ) আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রাম।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার লালমাটিয়ায় অবস্থিত উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগের উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অক্সফোর্ড একিউএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্ড্রু কম্বি। সভাপতিত্ব করেন উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অব স্কুলস আবদুল্লাহ জামান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অক্সফোর্ড একিউএর ট্রেনিং অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগের টিম লিডার ম্যাট ম্যাকগ্রেগর, বাংলাদেশ ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহিন রেজা, উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের জুনিয়র শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল সৈয়দা মিরা তাবাসসুম, সিনিয়র শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল পারভীন কাদের এবং গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল কর্নেল আলাউল কবিরসহ স্কুলের শিক্ষকেরা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আর্লি ইয়ার্স অ্যান্ড জুনিয়র স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল মহসিনা শারমিন নিশাত।

শিশুশিক্ষায় বিশ্বমানের সূচনা

যুক্তরাজ্যে চারটি শিক্ষা বোর্ড ব্রিটিশ কারিকুলামে পাঠদান করে। সেগুলো হলো ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (সিএআইই), পিয়ারসন এডেক্সেল, অক্সফোর্ড একিউএ এবং ওসিআর। এর আগে বাংলাদেশে প্রথম দুটি কারিকুলাম বিদ্যমান থাকলেও তৃতীয়টি শুরু হলো উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

অক্সফোর্ড একিউএ আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রাম কী

এ প্রোগ্রামটি মূলত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি একটি কাঠামোবদ্ধ ও গবেষণাভিত্তিক পাঠ্যক্রম, যা যুক্তরাজ্যের আর্লি ইয়ার্স ফাউন্ডেশন স্টেজ (ইওয়াইএফএস) কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন থেকে এ প্রোগ্রামটি বাংলাদেশের শিশুদের জন্যও সহজলভ্য হলো।

প্রোগ্রামটির সাতটি মূল ক্ষেত্র—ব্যক্তিগত, সামাজিক ও মানসিক বিকাশ, ভাষা ও যোগাযোগ, শারীরিক দক্ষতা, সাহিত্য ও পঠন অভ্যাস, প্রাথমিক গণিত, পরিবেশ ও বৈশ্বিক জ্ঞান এবং শিল্প ও সৃজনশীলতা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হেড অব স্কুলস আবদুল্লাহ জামান
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

এই প্রতিটি ক্ষেত্র শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে অবদান রাখে। প্রোগ্রামটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শিশুনির্ভর অনুসন্ধানভিত্তিক ও বিশ্বমানের মূল্যায়ন কাঠামোসমৃদ্ধ শিক্ষাপদ্ধতি, যা শিশুর শেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়ায়। তবে এ প্রোগ্রামটি ‘এ লেভেল’ পর্যন্ত কার্যকর হলেও উইটন ও গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল আপাতত আর্লি ইয়ার্স স্কুলেই প্রয়োগ করবে। ধীরে ধীরে অন্যান্য শ্রেণিতে তা প্রয়োগ করা হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অ্যান্ড্রু কম্বি বলেন, ‘বাংলাদেশে অক্সফোর্ড একিউএ আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে আমরা একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করলাম। এটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিফিকেশনস অ্যালায়েন্স বোর্ডের যৌথ একটি উদ্যোগ। উইটন ও গাইডেন্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই প্রোগ্রাম বাংলাদেশের প্রি-স্কুল শিক্ষায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সভাপতির বক্তব্যে আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অক্সফোর্ড একিউএর প্রি-স্কুল প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের লক্ষ্য হলো শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা। এর ফলে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই একটি কাঠামোগত, গবেষণানির্ভর, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা কারিকুলামের অভিজ্ঞতা পাবে, যা তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনের জন্য মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলবে।’

আবদুল্লাহ জামান আরও বলেন, ‘উইটন ও গাইডেন্স সব ময়ই শিশুকেন্দ্রিক ও মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেয়। প্রোগ্রামটি দেশের প্রি-স্কুল শিক্ষায় মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিশুদের শেখার পদ্ধতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা এ প্রোগ্রামটিকে আমাদের শিশুদের জন্য কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করবেন বলে আমি মনে করি।’

বক্তব্য দিচ্ছেন অক্সফোর্ড একিউএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্ড্রু কম্বি
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

অক্সফোর্ড একিউএ প্রোগ্রাম: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আয়োজন করা হয় একটি প্যানেল ডিসকাশন। সেখানে শিক্ষকেরা অক্সফোর্ড একিউএ আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রাম সম্পর্কে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর জানতে পারেন। প্যানেল ডিসকাশনটি পরিচালনা করেন ম্যাট ম্যাকগ্রেগর। আলোচক হিসেবে ছিলেন অ্যান্ড্রু কম্বি, আবদুল্লাহ জামান ও শাহিন রেজা।

সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমেই শেখে বেশি। নতুন এ প্রোগ্রামটি তাদের জন্য কতটা উপযোগী?—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যান্ড্রু বলেন, ‘নির্দিষ্ট বয়সের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই এটি ডিজাইন করা হয়েছে। শিশুরা সেভাবেই শিখবে, যেভাবে আপনি বলছেন। যেহেতু উইটন ও গাইডেন্স স্কুল এ প্রোগ্রামটি প্রয়োগ করছে, আমরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাসামগ্রী, মডিউলসহ সবই দেওয়া হবে।’

অক্সফোর্ড একিউএ প্রোগ্রামটি যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। সে দেশের পরিবেশ আর আমাদের দেশের পরিবেশ তো এক নয়। সে ক্ষেত্রে নতুন এ কারিকুলামের সঙ্গে নিজেদের অভ্যস্ততা তৈরি করতে পরিবেশ কতটুকু সহযোগী হবে?—এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘এ প্রোগ্রামটির জন্য ভৌগলিক পরিবেশের চেয়ে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশটা জরুরি। প্রোগ্রামটির অধীনে যে রিসোর্স আছে, সেগুলো পরিচালনার জন্য সক্ষম শিক্ষক ও প্রযুক্তি আমাদের আছে কি না? যদি থাকে তাহলে শিশুরাও মানিয়ে নিতে পারবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের উইটন ও গাইডেন্স স্কুল নতুন এ প্রোগ্রামটির সফল বাস্তবায়নে পুরোপুরি সক্ষম।’

প্যানেল ডিসকাশনে অংশগ্রহণকারী আলোচকেরা
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

আলোচনার একপর্যায়ে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড একিউএ আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রামের পথচলার অগ্রদূত হিসেবে গাইডেন্স ও উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা উইটন বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধানমন্ডিতে অবস্থিত এই স্কুলে ‘প্লে গ্রুপ’ থেকে ‘এ লেভেল’ পর্যন্ত পাঠদান হয় ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলাম অনুযায়ী। অন্যদিকে ২০২১ সালে গুলশানে প্রতিষ্ঠিত গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল উইটনের শিক্ষাদর্শন অনুসরণে গঠিত।

অক্সফোর্ড একিউএ আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রামের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে উইটন ও গাইডেন্স প্রমাণ করল, তারা শুধু অ্যাকাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বেই নয়, বরং একটি মূল্যবোধভিত্তিক, আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল।

লেখক: তারেক মাহমুদ নিজামী