ঢাবিতে গবেষণা ও প্রকাশনা মেলায় শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতার আহ্বান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা’। আজ শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দুই দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন হয়েছে। আজ ও আগামীকাল রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই মেলা চলবে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এ ছাড়া অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ ও কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তাঁদের সবার বক্তব্যে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো ও শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি উঠে এসেছে। আলোচনা পর্ব শেষে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই গবেষণার পক্ষে। প্রতিটি গবেষণাই কাজে আসতে পারে। দেশে অনেক ক্ষেত্রে আরও গবেষণা দরকার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসন্ন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দিনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের আজকে একদিকে সুদক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করতে হচ্ছে, অন্যদিকে আবার চিন্তা করতে হচ্ছে যে রোবোটিকসের ফলে অটোমেশন হয়ে গেলে কর্মীবাহিনী কর্মহীন হয়ে পড়ে কি না। এ বিষয়গুলোকে আমাদের সমন্বয় করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে অ্যালামনাইসহ সবার সহযোগিতা থাকা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সব অর্থনৈতিক সংগতি কর্তৃপক্ষের একার নেই। এখানে সরকারেরও দায়িত্ব আছে, শিল্প মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব আছে। সবার প্রতি আহ্বান, আমরা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, সরকারের বাইরেও যেন আমরা তাঁদের প্রতি হাত বাড়াই। আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইন্টার্নসহ যেকোনো গবেষণাকাজে সুযোগ করে দেওয়া হবে।’

গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথমে একাডেমিক মহাপরিকল্পনা হওয়া উচিত। তার ভিত্তিতে হওয়া উচিত অবকাঠামোগত মহাপরিকল্পনা। অর্থাৎ আগে গবেষণার সম্পৃক্ততাসহ একাডেমিক লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, অবকাঠামো হচ্ছে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অনুষঙ্গ। শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ সর্বাধিক হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করব। তবে সারা বিশ্বে গবেষণার বিষয়টি শুধু সরকারের বরাদ্দে সম্ভব হয় না। পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা-প্রকাশনার জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সংস্থান থাকে। এটি আমাদের বাড়ানো খুব প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতার চরম ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কমিউনিটি এনগেজমেন্টের সংস্কৃতি বাংলাদেশে নেই। বেশ কয়েক বছর আগে এ বিষয় অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। এর ফলে শতবর্ষ উদ্‌যাপনে নানা উদ্যোগ নিতে গিয়ে কমিউনিটি এনেগেজমেন্টের বিষয়টি আমরা যুক্ত করি। প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়া খুব জরুরি। এ ধরনের মেলার মধ্য দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বা সমাজ কী চায়, সেই নিরীখে আমাদের পাঠ্যসূচি পুনর্গঠিত হবে। এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি গবেষণা-সংস্কৃতি তৈরি হবে।’

যা থাকছে মেলায়

দুই দিনব্যাপী গবেষণা ও প্রকাশনা মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউট ও গবেষণাকেন্দ্র তাদের উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রকাশনা তুলে ধরবে। মেলায় অনুষদগুলোর জন্য ১০টি, ইনস্টিটিউটগুলোর জন্য ১টি, প্রকাশনা সংস্থার জন্য ১টি এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলোর জন্য ১টিসহ মোট ১৩টি প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১টি কেন্দ্রীয় মঞ্চ রয়েছে। মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রকাশনাসহ উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলো প্রদর্শন ও উপস্থাপন করা হচ্ছে। মেলায় ৫৫টি গ্রন্থ, ২৬টি বিশেষ জার্নাল, ২১৬টি গবেষণা প্রকল্প, ৬২৪টি পোস্টার এবং ৮৬টি ফ্লাইয়ার-ব্রুশিয়ার প্রদর্শিত ও উপস্থাপিত হবে।

এই আয়োজনে প্রত্যেক অনুষদের প্যাভিলিয়নের সঙ্গে অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর ১টি করে স্টল এবং ইনস্টিটিউটের প্যাভিলিয়নের সঙ্গে প্রত্যেক ইনস্টিটিউটের ১টি করে স্টল রয়েছে। আজ উদ্বোধনী দিন বেলা তিনটায় কলা, বিজ্ঞান, আইন, ব্যবসায় শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা হচ্ছে। কাল রোববার সমাপনী দিন সকালে জীববিজ্ঞান, ফার্মাসি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চারুকলা অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা থাকছে। এ ছাড়া সব ইনস্টিটিউটের পক্ষে ১টি এবং গবেষণাকেন্দ্র বা ব্যুরোর পক্ষে ১টি উপস্থাপনা থাকছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

কাল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে কবিতা, রচনা ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রত্যেক জার্নালের বিশেষ সংখ্যার শ্রেষ্ঠ আর্টিকেল লেখককে সনদ, ক্রেস্ট ও প্রাইজ মানি দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক অনুষদ, ইনস্টিটিউট ও সেন্টার কর্তৃক উপস্থাপিত পোস্টারের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোস্টার উপস্থাপনকারীকেও পুরস্কার দেওয়া হবে।