শিক্ষামন্ত্রীর ‘আশ্বাস’, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মবিরতি স্থগিত

টানা তিন দিনের ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা
ফাইল ছবি

দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকের পরদিন কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ১৭ ও ১৯ অক্টোবর এই কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।

আন্তক্যাডার-বৈষম্য নিরসন ও সুপারনিউমারারি পদ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত পদ) সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে নতুন করে এই দুই দিনের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁরা।

কিন্তু গতকাল শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে রাজধানীতে তাঁর সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। বৈঠক শেষে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ বৈঠক হয়েছে। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দাবিদাওয়াগুলোকে যৌক্তিক বলেছেন।

যেগুলো অবিলম্বে পূরণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন। যেহেতু কিছু বিষয় আন্তমন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত, সেগুলো হয়তো সময় লাগতে পারে, সেগুলো ধাপে ধাপে করা হবে। এ অবস্থায় আজ রোববার কর্মবিরতির বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এ অবস্থায় আজ সমিতির এক বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

অবশ্য গতকালের বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছিল, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে বলে দেবেন।

ছবি: সংগৃহীত

আর সম্প্রতি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির পরও এ পদে আরও পদোন্নতির সুযোগ আছে কি না, সেটিও দেখা হবে। অন্যান্য পদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। এ ছাড়া কিছু বিষয় আছে আন্তমন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত, সেগুলো নিয়েও আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মবিরতি স্থগিত করা হতে পারে।

আরও পড়ুন

দাবি আদায়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। প্রথমে ২ অক্টোবর ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ পালন করেছিলেন তাঁরা। এরপর ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করেন।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে দেশের সরকারি কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল। ফলে সরকারি কলেজগুলোয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে কলেজগুলোয় ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কাজ করেননি।

এরপর আবার নতুন দুই দিনের কর্মবিরতি ঘোষণার পর এ পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছিল, পদোন্নতি-বৈষম্য কমাতে সব ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া, অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড তৃতীয় ধাপে উন্নীত করা এবং অর্জিত ছুটির সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ ‘দখলের মানসে’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির অভিযোগ, পদোন্নতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার।