আয়ারল্যান্ডে প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ার, যেভাবে সুযোগ মিলবে বাংলাদেশিদের

ফাইল ছবি

বর্তমানে প্রযুক্তি, নির্মাণ ও বায়োমেডিকেল খাতে দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম একটি আয়ারল্যান্ড। দেশটি দক্ষ প্রকৌশলীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বের প্রকৌশলীদের (ইঞ্জিনিয়ার) জন্য এটি অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্রবিন্দু। তাই বাংলাদেশিদের জন্য আয়ারল্যান্ড হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য, বিশেষ করে আইটি, মেকানিক্যাল, সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে।

আয়ারল্যান্ডে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ, বহুজাতিক কোম্পানির উপস্থিতি এবং স্থানীয় দক্ষ কর্মীর স্বল্পতা এই ক্ষেত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, মেডট্রোনিক, ফাইজারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এখানে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার ও নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। নির্মাণ ও স্থাপত্য খাতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করা সম্ভব। বায়োমেডিকেল ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে মেডিকেল ডিভাইস ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ও যন্ত্র প্রকৌশল খাতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা আয়ারল্যান্ডকে তাঁদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য গন্তব্যের স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

আয়ারল্যান্ডের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা ও আর্দ্র। এখানে গ্রীষ্মকাল খুবই মৃদু এবং শীতকাল খুব বেশি তীব্র নয়। গড় তাপমাত্রা শীতকালে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ১২ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আয়ারল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টি হয়, যা সারা বছর স্থায়ী হতে পারে। আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে মৃদু থাকায় এটি বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য সহনীয়। আইরিশ সংস্কৃতি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও অতিথিপরায়ণ। এখানকার স্থানীয় লোকজন সাধারণত নতুন অভিবাসীদের সহজেই গ্রহণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন। আয়ারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী সংগীত, উৎসব ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বৈচিত্র্যময়। স্থানীয় খাবার, পানীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ডে অনেক আন্তর্জাতিক কমিউনিটি রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশিসহ অন্য অভিবাসীরা নিজেদের সংস্কৃতি ও সামাজিকতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।

যাঁরা পরিবারসহ আয়ারল্যান্ডে যেতে চান, তাঁদের জন্য এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। সরকারি স্কুলগুলো বিনা মূল্যে শিক্ষা প্রদান করে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আয়ারল্যান্ডে বেশ কিছু বাংলাদেশি স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ‘অল বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড’ নামে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব সংগঠন বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্‌যাপনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক বিকাশেও তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আয়ারল্যান্ডের পরিবেশ অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ। এটি বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। অপরাধের হার অনেক কম ও আইনশৃঙ্খলা অত্যন্ত উন্নত। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে কাজ করে। কর্মস্থল ও সামাজিক জীবনে সমানাধিকারের ভিত্তিতে সবাইকে সুযোগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

একজন বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারকে আয়ারল্যান্ডে চাকরি পাওয়ার জন্য স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অনেক ক্ষেত্রে আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোরের প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা ও আয়ারল্যান্ডের চাকরির বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা দরকার। বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত Critical Skills Employment Permit বা General Employment Permit গ্রহণ করে আয়ারল্যান্ডে কাজ করার সুযোগ পান। Critical Skills Employment Permit উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবীদের জন্য বিশেষভাবে প্রদান করা হয় এবং এটি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দেয়।

আয়ারল্যান্ডে চাকরির জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে অনলাইন চাকরি পোর্টাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন LinkedIn, Indeed Ireland, IrishJobs.ie,Jobs.ie, PublicJobs.ie এবং Glassdoor.ie। এ ছাড়া CPL, Sigmar Recruitment, Hays Ireland-এর মতো নিয়োগ সংস্থা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। সরকারি ওয়েবসাইট, যেমন Department of Enterprise, Trade and Employment-এর মাধ্যমে সরাসরি তথ্য পেতে পারেন। এর পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করাও একটি ভালো উপায় হতে পারে কর্মসংস্থানের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

আয়ারল্যান্ডে ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন, অভিজ্ঞতা ও চাকরির ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। আইটি ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত বছরে ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন পান, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ৪০,০০০ থেকে ৭০,০০০ ইউরো পর্যন্ত এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন ৪৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ ইউরোর মধ্যে হতে পারে। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন সাধারণত ৫০,০০০ থেকে ৮৫,০০০ ইউরোর মধ্যে থাকে। তবে এই পরিসংখ্যানগুলো সময়, অভিজ্ঞতা ও অন্য শর্তের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে পেশাজীবীরা সহজেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। যাঁরা আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের উচিত আগেভাগে ভিসা ও চাকরির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া। আয়ারল্যান্ডে চাকরির সুযোগ ব্যাপক, বেতন আকর্ষণীয়, জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা সেখানে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

*সৈয়দ আতিকুর রব

আরও পড়ুন