ঢাকার ৭ কলেজের শিক্ষকেরা শুরু করেছেন তিনদিনের কর্মবিরতি, ক্লাস হচ্ছে না
টানা তিনদিনের কর্মবিরতি শুরু করেছেন ঢাকার ৭ কলেজের শিক্ষকেরা। এজন্য কলেজগুলোতে ক্লাস হচ্ছে না। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমানপরীক্ষাগুলো এই কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, ঢাকার এই সাত কলেজকে নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নামে ভর্তি ও ক্লাস শুরু করা নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি আইনসিদ্ধ নয়। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতির কারণেই তারা আজ মঙ্গলবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। যা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।
আজ পৌনে ১১ টায় সাত কলেজের অন্যতম ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায় কলেজে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্র এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। এমন দুজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। তাদের একজন বলল ক্লাস হবে না সেটা আগে জানত না। আরেকজন বলল সকালে উপস্থিতি (এটেনডেনস) দিলেও ক্লাস হয়নি। এমন অনেক শিক্ষার্থী সকালে উপস্থিতি দিয়ে চলে গেছে। কলেজের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষক বসে আছেন। একাধিক শিক্ষক বললেন, কর্মবিরতি চলছে।
আগের দিন গতকাল সোমবার শিক্ষকেরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন) বা সমকক্ষ প্রতিষ্ঠানের অন্তর্বর্তী প্রশাসক ১৬ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তাতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া ১৭ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে হবে।
কিন্তু শিক্ষকেরা মনে করেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার আগেই এই বিজ্ঞপ্তি আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে। শিক্ষকেরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বিধিবদ্ধভাবে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন ও ক্লাস শুরুর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তাঁরা দ্রুততম সময়ে সাত কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করে সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকার এই সাত কলেজ ঘিরে অনেক দিন ধরেই সংকট চলছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি এসব কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে নতুন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কাটেনি। বরং নতুন নতুন সংকট সামনে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে শিক্ষকেরা এর আগে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এখন টানা তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করলেন।