বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাঙ্কিং ও উপাচার্য নিয়োগে ‘পুল’ চায় ইউজিসি

খ্যাতনামা শিক্ষকদের ‘পুল’ গঠন করে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ তিন পদ উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আদলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি অভ্যন্তরীণ র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু এবং শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপনের সুপারিশ করেছে দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।

ইউজিসির সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার জন্য মোট ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও উচ্চশিক্ষার নানা তথ্য নিয়ে প্রতিবছরই সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেয় ইউজিসি।

বর্তমানে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ১৬৯টি। এর মধ্যে ৫৫টি সরকারি ও ১১৪টি বেসরকারি। অবশ্য যে বছরের (২০২২) তথ্য নিয়ে ইউজিসি প্রতিবেদন করেছে, তখন দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১০টি (শিক্ষাক্রম চালু ছিল ১০০টিতে) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থী ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭।

আরও পড়ুন

১৯৭৩ সালে যখন ইউজিসির যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সরকারের নীতি হলো প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় করা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিপুলসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যোগ্য উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পাওয়া অনেক সময় কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের পর দেখা যায় উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অদক্ষতার পাশাপাশি নানা রকমের অনিয়ম-দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠছে।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক, আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় কাজের দক্ষতাসম্পন্ন উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৩ সালের আদেশে চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (চারটি) ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শীর্ষ এই তিন পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। তাই এই তিন পদে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের খ্যাতনামা শিক্ষকদের একটি ‘পুল’ গঠন করা যেতে পারে। অর্থাৎ যোগ্য শিক্ষকদের বাছাই করে তালিকা করে রাখা হবে। তারপর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে সেই তালিকার মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে।

আরও পড়ুন

ইউজিসি বলছে, গুণগত ও মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকার জাতীয় পর্যায়ে একটি অভ্যন্তরীণ র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজনীয় গ্রহণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এই র‍্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু হতে পারে। এই কার্যক্রম নেওয়ার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে বলে ইউজিসির সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিন থেকে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ

শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথ সম্পর্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইউজিসি। সংস্থাটি বলছে, স্নাতকদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা (ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি কলাবোরেশন) স্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকর ইন্টার্নশিপ চালু করলে তা স্নাতকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং তা চাকরিতে প্রবেশ ও ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

ইউজিসি বলছে, শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে মানসম্মত প্রকাশনায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়াসহ তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের (ইয়াং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড) ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

দেশের ভেতর পিএইচডি গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইউজিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশীয় গবেষণাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। দেশের মেধাবীরা যাতে গবেষণায় এগিয়ে আসতে পারেন, সে লক্ষ্যে পিএইচডি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বাড়ানোসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেছে ইউজিসি।

ইন্ডাস্ট্রি-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ গবেষণা বাস্তবায়নের জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ এবং পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের বিধান রেখে নীতিমালা করা ও গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি রোধে যুগোপযোগী নীতিমালা করে, তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষাবিষয়ক মহাপরিকল্পনা (একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়নের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। এভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪টি সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবারের প্রতিবেদনে নানা সুপারিশের মধ্যে তাঁরা শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য স্টার্টআপ (উদ্ভাবনী উদ্যোগ) চালু করা, তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আরও পড়ুন