আন্দোলনকারী ১৪ জন, পুলিশ ৩০ জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অগণতান্ত্রিক প্রশাসনের’ কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
ছবি: প্রথম আলো


স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অগণতান্ত্রিক প্রশাসনের’ কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট। কর্মসূচিতে জোটের ১৪ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন। আর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন ছিলেন পুলিশের ৩০ জন সদস্য।


আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা৷ জোটের অন্য দুই দাবি হলো শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন বেতন-ফি মওকুফ করা ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) বর্তমান অবকাঠামো না ভাঙা৷

ইতিমধ্যে অনেক বিভাগে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে, অনেক বিভাগে পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া আছে৷ ঢাকার বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকায় এসে কোথায় থাকবেন, কী করবেন— তার কোনো নিশ্চয়তা না দিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে টিএসসি থেকে মিছিল বের করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা৷ ‘অগণতান্ত্রিক প্রশাসন’ লেখা একটি কুশপুত্তলিকা নিয়ে দাবির পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন৷ সেখানে তাঁদের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়৷ সমাবেশ চলাকালে পুলিশের ৩০ জন সদস্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে উপস্থিত ছিলেন৷

সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক সোহাইল আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে৷ ওই দিন সারা দেশে অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমরা অনলাইন ও অফলাইনে সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানাই৷’

সোহাইল অভিযোগ করেন, ‘করোনার বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে এসে কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়াই পরীক্ষায় বসিয়ে দিচ্ছে৷ এটি একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জুলুমের শামিল৷ ইতিমধ্যে অনেক বিভাগে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে, অনেক বিভাগে পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া আছে৷ ঢাকার বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকায় এসে কোথায় থাকবেন, কী করবেন— তার কোনো নিশ্চয়তা না দিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ করোনা মহামারি অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে৷ নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আয় কমে যাওয়া ও চাকরি হারানোর পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও এ বছরের ফিগুলো নেওয়া হচ্ছে। নিদিষ্ট সময়ে বেতন-ফি দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের জরিমানাও গুনতে হচ্ছে৷ প্রশাসনের এসব অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানাই।’

টিএসসি ভবণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিএসসি ভবন কেবল ইট-পাথরের কোনো ভবন নয়৷ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্র এই টিএসসি৷ সব মত ও পথের মানুষের মিলনকেন্দ্র এই টিএসসি৷ এই টিএসসি ভেঙে ২০ তলা ভবন বানিয়ে এর পরিসরকে সংকুচিত করার চক্রান্ত চলছে৷ ছাত্রসমাজ এই চক্রান্ত মেনে নেবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সংকট চলছে৷ হলে জায়গা নেই, শিক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারেন না৷ তাঁরা হলের বারান্দা, মসজিদ ও ক্যানটিনে ঘুমান৷ গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা নেই৷ এসবের সুরাহা না করে প্রশাসন ২০ তলা ভবন নির্মাণের যে প্রকল্প নিচ্ছে, তার পুরোটাই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে৷ এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো স্বার্থ নেই৷ এসব বিষয়ের সুরাহা করে অবিলম্বে ক্যাম্পাস খোলার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

জোটভুক্ত সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সাদেকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা বক্তব্য দেন৷ উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, কর্মী আরাফাত সাদ প্রমুখ৷

সমাবেশ শেষে কুশপুত্তলিকা দাহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ও আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে চান৷ তাঁরা আন্দোলনকারীদের বলেন, কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর আগে একটু কথা বলি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কুশপুত্তলিকা দাহ করার আগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি৷ তাঁদের সামনেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কুশপুত্তকলিকায় কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন।

গত ১০ ডিসেম্বর হুট করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল বন্ধ রেখেই স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়৷ এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনই সরব হয়েছে৷ করোনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ উন্নয়ন ফি মওকুফ করলেও বেতন-ফি মওকুফ করেনি৷ তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক বিভাগে আগের হারেই উন্নয়ন ফি নেওয়া হচ্ছে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকে ভেঙে নতুন করে গড়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ৷