ইয়েস প্রোগ্রামে আমেরিকায় পড়ার সুযোগ

২০০২ সালের ইয়েস প্রোগ্রামের যাত্রা শুরু হয়
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে হাইস্কুলে যে শিক্ষার্থীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য সুযোগ সামনে এসেছে। আর এই সুযোগ এনে দিয়েছে কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি বা (YES) নামের একটি প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আবেদনকারীদের মধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা আমেরিকান পরিবারের আতিথেয়তায় এক শিক্ষাবর্ষ অবস্থান করবে এবং আমেরিকার হাইস্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেনেডি-লুগার ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড স্টাডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ইয়েস বৃত্তি একটি মেধাভিত্তিক ও উন্মুক্ত কার্যক্রম। এতে বিনা মূল্যে আবেদন করা যাবে। তিন শতাধিক বাংলাদেশি হাইস্কুল শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত ইয়েস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অর্থায়নে ইয়েস প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের ৮-১১ গ্রেডের হাইস্কুল শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের জন্য বৃত্তি প্রদান করা হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আমেরিকানদের কাছে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ তুলে ধরারও সুযোগ পেয়ে থাকে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও এ কার্যক্রমে সুযোগ পেতে পারে এবং তাদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা।

ইয়েস (YES) বৃত্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজন

  • কার্যক্রম শুরুর দিন (১ আগস্ট ২০২১) বয়স ১৫-১৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। ১৫ বছরের এক দিন কমও নয় আবার ১৭ বছরের এক দিন বেশিও নয়।

  • জন্মতারিখ ১ আগস্ট ২০০৪ থেকে ১ আগস্ট ২০০৬-এর মধ্যে হতে হবে।

  • বর্তমানে বাংলাদেশি উচ্চবিদ্যালয়ে বা কলেজের (মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) অষ্টম, নবম, দশম বা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি থাকতে হবে। *বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি নাগরিকেরা আবেদনের জন্য যোগ্য হবে না।

  • গত দুই শিক্ষাবর্ষে কোনো শ্রেণিতে অকৃতকার্য হয়নি এবং গড়ে ‘বি’ সমমান বা তার চেয়ে ভালো ফলাফল থাকতে হবে।

  • ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখাপড়ার জন্য ইংরেজি ভাষায় পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকতে হবে।
    গত পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকলে তা মোট ৯০ দিনের বেশি হতে পারবে না।

  • আবেদনকারীর বাবা–মায়ের যে কেউ অথবা উভয়ই যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বা যুক্তরাষ্ট্র মিশনের বর্তমান কর্মী হতে পারবেন না।

  • পরিবার ও আত্মীয়দের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের আবেদনকারীরা আবেদনের জন্য যোগ্য হবে না।

  • বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের দ্বৈত নাগরিক বা স্থায়ী অভিবাসী হতে পারবে না।

  • যুক্তরাষ্ট্রের জে-১ ভিসার জন্য যোগ্যতার শর্তাবলি পূরণ করতে হবে (উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা জে-১ ভিসার জন্য যোগ্য নয়)।


আবেদনকারীদের যে যে যোগ্যতা বৃত্তি প্রাপ্তিতে সহায়ক হতে পারে


  • এক শিক্ষাবর্ষের জন্য নিবিড় শিক্ষাকার্যক্রম, সামাজিক সেবাকর্ম এবং শিক্ষাসফরে পুরোপুরি অংশ নেওয়ার আগ্রহ ও সক্ষমতা

  • আমেরিকার হাইস্কুল জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং আমেরিকান কোনো পরিবারের আতিথেয়তায় থাকার প্রস্তুতি

  • পরিণত, দায়িত্বশীল, স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী, মুক্তমনা, সহনশীল, চিন্তাশীল ও অনুসন্ধানী বৈশিষ্ট্য

  • নিবিড় শিক্ষাকার্যক্রম, সামাজিক সেবাকর্ম ও শিক্ষাসফরে পুরোপুরি অংশ নেওয়ার আগ্রহ ও সক্ষমতা, ক্যাম্পাস জীবনের সঙ্গে সহজভাবে মানিয়ে নেওয়া, জায়গা ভাগাভাগি করে থাকার প্রস্তুতি, নিজ দেশের থেকে ভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক রীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আগ্রহ ও সক্ষমতা

  • আমেরিকার স্কুল ও জনসমাজে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার সক্ষমতা

  • কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি।

এখন পর্যন্ত ৩৮৯ জন শিক্ষার্থী ইয়েস প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেছে
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইয়েস প্রোগ্রামের বিস্তারিত এবং আবেদনের বিস্তারিত নির্দেশাবলি জানা যাবে http://www.iearnbd.org/. তে। আর আবেদনপত্র https://bd.usembassy.gov/education-culture/student-exchange-programs/ এ পাওয়া যাবে। আবেদনের নির্দেশাবলি পর্যালোচনার পর আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে [email protected] বা [email protected] ঠিকানায় ই-মেইল করতে জানতে পারবেন আগ্রহীরা।

মনে রাখতে হবে, যোগ্যতার শর্তাবলি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট কর্তৃক নির্ধারিত এবং এর ব্যতিক্রম করা সম্ভব নয়।

ইয়েস প্রোগ্রামের আদ্যপান্ত

ইয়েস প্রোগ্রাম ২০০২ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৃত্তি সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড এম কেনেডি এবং সিনেটর রিচার্ড লুগারের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। প্রোগ্রামটির উদ্দেশ্য পারস্পরিক আগ্রহের ভিত্তিতে সবার সঙ্গে সবার সংযোগ স্থাপন করা এবং ব্যক্তির জাতীয়তা বা জাতিগত উৎসের ওপর ভিত্তি করে ভুল ধারণা বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে একে অপরকে সম্মান করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে Kennedy-Lugar Youth Exchange and Study (YES) প্রোগ্রামটি যুক্তরাষ্ট্রে এক একাডেমিক বছরের বৃত্তিতে থাকার এবং পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা হোস্ট পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে, উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, আমেরিকান সমাজ এবং মান সম্পর্কে জানতে পারে, নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করে এবং তাদের দেশ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আমেরিকানদের শিক্ষিত করতে সহায়তা করে।

৪০টির বেশি দেশ থেকে ১২ হাজারের বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েছে ইয়েস প্রোগ্রামের আওতায়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরপর থেকে ৩৮৯ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। তারা সবাই ইয়েস অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের একটি অংশ। ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসোর্স নেটওয়ার্ক–বাংলাদেশ (iEARN-BD) বাংলাদেশে ইয়েস প্রোগ্রামকে সহায়তা করে। YES প্রোগ্রামটি তরুণ অগ্রদূতদের নেতৃত্বের শিক্ষা, নাগরিক সমাজের নিয়মনীতি এবং সম্প্রদায়ের পরিসেবার যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং এর দ্বারা তারা তরুণদের ধারণা, মূল্য এবং অভিজ্ঞতা তৈরির উৎসাহ দেয়।