করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার যখনই স্কুলগুলো খোলার বিষয়ে চিন্তা শুরু করল, তখনই করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এল। কাজেই আমাদের ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই স্কুল না খুলে এখন ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয়, তাহলে স্কুল খোলা হবে, না হলে আমরা খুলব না।’ করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্য বই পড়ার এবং শরীরচর্চা ও খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে নেওয়ার জন্যও অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রাথমিক স্তর, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (জুম, মেসেঞ্জার, ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব) ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাস রেকর্ডিং করে কিশোর বাতায়ন, শিক্ষক বাতায়ন এবং ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কাজেই ঘরে বসে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।’

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২ পাঠ্যপুস্তক বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন কয়েকজন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন।

যেভাবে বই বিতরণ হবে

আগামীকাল ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বই বিতরণ শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে তিন দিন করে মোট ১২ দিন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১ জানুয়ারি বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে বই পাচ্ছে। এবার ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে শিক্ষার্থীদের মানসিক শিক্ষার বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যদিও ঘরে বসে সময় কাটানোটা অত্যন্ত কষ্টকর, তারপরও শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, অন্য আরও অনেক বই আছে, যেগুলো পড়া যায়, তা পড়ার জন্য আমি অনুরোধ করব। সেই সঙ্গে একটু খেলাধূলাও করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা অভিভাবক বা মা–বাবা রয়েছেন, তাঁদের আমি অনুরোধ করব, আপনারা বাচ্চাদের সময় দেবেন। কারণ, করোনাভাইরাস যেমন আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, তারপরও হাজার কাজের চাপের মধ্যেও ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন, এই সুযোগটার আপনারা সদ্ব্যবহার করবেন।’

শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম নিজ নিজ মন্ত্রীকে বই বিতরণে সহযোগিতা করেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিশুরা পাবে নিজ ভাষার ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ বই

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধু বাংলা বইটি পাবে। এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।

অন্যদিকে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের ব্যাক পেজে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর (২০২০) পর্যন্ত এই ১০ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে।