ছয় শিক্ষক পেলেন আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননা

১১তম নৈতিকতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ছয় শিক্ষককে ‘আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

অনলাইনে ১১তম নৈতিকতা দিবসের অনুষ্ঠান হয়ে গেল গত সোমবার। এথিকস ক্লাব এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। এতে দেশের বিশিষ্ট ছয় শিক্ষককে ‘আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা’ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এই সম্মাননা প্রদান ১১ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। অনলাইনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান প্রথম আলোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম। তিনি এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রয়াত উপদেষ্টাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘নৈতিকতা সব ক্ষেত্রেই জরুরি এবং আমরা চেষ্টা করছি, শিক্ষাব্যবস্থায় একেবারেই সেই শৈশব থেকে যেন এই নৈতিকতাবোধ আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রবাহিত করে দিতে পারি, যাতে তাদের মনের মধ্যে এটি থাকে। তাহলে সমাজকে নৈতিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, নৈতিকতা হলো ভালো–মন্দ বিচার–বিশ্লেষণ। চুরি না করা, মিথ্যা কথা না বলা। তিনি সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা তুলে ধরেন। নৈতিকতাবোধের যথেষ্ট অভাব আছে বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া তিনি নৈতিকতার জন্য একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘সামাজিক আন্দোলনের পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদের যে ছাত্রছাত্রীরা আছে, তাদের নৈতিকতাবোধ শেখানো। সে জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতা শিক্ষা চালু করা দরকার।’ তিনি এই সামাজিক আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে জোর দেন এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতা ক্লাব বা এথিকস ক্লাব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

সম্মাননা পাওয়া ছয় শিক্ষক

অন্যান্য আলোচকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন মেডিকেল এথিকস সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, যেকোনো এথিকস বাস্তবায়ন করা একটা চ্যালেঞ্জ। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এথিকসের প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন সম্ভব বলে জানান তিনি।

নিউইয়র্ক থেকে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক হাসান ফেরদৌস জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমরা মানুষকে যখন সংজ্ঞায়িত করি, তখন কতগুলো বিষয় নিয়ে আসি। তার একটা বড় জায়গা যেটা নীতিশাস্ত্র বলছেন, সেটা নৈতিকতা। নৈতিকতা একই সঙ্গে সর্বজনীন এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এম আকাশ বলেন, নৈতিকতার ব্যাপারে শুধু পরামর্শ দিলে হবে না। যিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি সেটা নিজে চর্চা করছেন, এই শর্ত পূরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান। এথিকস ক্লাবের পক্ষ থেকে এ বছর যে ছয়জনকে ‘আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা’ দেওয়া হবে, তাঁদের নাম ঘোষণা করেন। এই শিক্ষকেরা হলেন—
১. ইমিরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
২. অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩. অধ্যাপক কাশিনাথ রায়, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪. ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
৫. মো. নুরুল আলম, সাবেক প্রধান শিক্ষক, খুলনা জেলা স্কুল
৬. মিল্টন মানখিন, শিক্ষক, ধলুয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ

ম্যাক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, পুরো সমাজের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে যে কত অনৈতিক হওয়া যায়। এর থেকে বের হয়ে আসতে হলে আলোকিত মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ বিনির্মাণে দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। সুযোগ পেলে এ ধরনের ভালো কাজে ম্যাক্স গ্রুপও দায়িত্ব নিতে পারে।

অনুষ্ঠানের শেষে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম আলোচকদের ধন্যবাদ দেন এবং পুরস্কৃত শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান। এ ছাড়া এথিকস ক্লাব যে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, সে জন্য এথিকস ক্লাবকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এম ই চৌধুরী শামিম শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ২৫ জানুয়ারিকে নৈতিকতা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।