জামায়াতের পরিবর্তে আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডে এবার আওয়ামী লীগ

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম
প্রথম আলো ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টির পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১ মার্চ ২১ সদস্যের নতুন বোর্ডের অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। বোর্ডের সদস্যরা সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগ ঘরানার। বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম। ওই বোর্ডের ১২ সদস্যের প্রায় সবাই জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সমর্থক।

নতুন বোর্ড গঠন নিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি ব্যাখ্যা হাজির করছে। এ নিয়ে দুই পক্ষই চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক পূর্বকোণ ও আজাদীতে প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

জানতে চাইলে নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চর দখলের মতো দখল করে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে চলেছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের যোগ্যতাসম্পন্ন সন্তানদেরও বাদ দিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তাঁকেও (নেজামুদ্দিন) বাদ দেওয়া হয়।

এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করেন নেজামুদ্দিন নদভী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর শনিবার প্রথম সভা করেছেন বলে জানান তিনি। তবে সভার তারিখ ঘোষণার খবর শুনে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নেজামুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে থাকতে বলা হলেও কেউ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। উল্টো সভা যাতে করা না যায়, সে জন্য বড় বড় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে ছোট একটি কক্ষে কোনো রকম সভা করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলুপ্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম, উপাচার্য কে এম গোলাম মহিউদ্দিন, রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হাশেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও কোনো কর্মকর্তা কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি না মেনে বরং চর দখলের মতো নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ৪ মার্চ স্থানীয় দুটি দৈনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা মাওলানা আবদুল জব্বারের ছেলে মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভীর নামে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন দেওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

তবে পরদিন এই বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদনের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সত্য নয়। এরপর গত শনিবার এই প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেন সাংসদ নেজামুদ্দিন নদভী। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধভাবে আইআইইউসির প্যাড ব্যবহার করে বাতিল হওয়া ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।

আইন ও বিধি মোতাবেক নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুসারে এর কোনো ট্রাস্টি বোর্ড ছিল না।

উদ্যোক্তাদের সন্তানদের বাদ দিয়ে ২০১৬ সালে গোপনে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়, যার কোনো অনুমোদন নেওয়া হয় নাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিছুদিন আগে উদ্যোক্তাদের সন্তানেরা এবং আর্থিকভাবে সহায়তাকারী বেসরকারি ব্যক্তিদের অনুরোধে নতুন ট্রাস্ট গঠিত হয়, যা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এতে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি নেই বলে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত। বোর্ডের অন্য সবাই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে থাকেন?