ঝরে পড়াদের ধরে রাখার উদ্যোগ

অসীম কুমার রায়

ঝরে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে কাজ করছে পে ইট ফরওয়ার্ড। ফেসবুকভিত্তিক এই সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালের জুন মাসে। এখন পর্যন্ত এর ছাতার নিচে রয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান নয়, গত চার বছরে পে ইট ফরওয়ার্ড পর্যায়ক্রমে আরও বিভিন্ন ধরনের সহযোগী সংগঠন তৈরি করছে।

গত চার বছরে পে ইট ফরওয়ার্ডের কল্যাণে বৃত্তি পেয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। পাশাপাশি সারা দেশের আরও প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।

চট্টগ্রাম কর বিভাগের কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ। যিনি বাদল সৈয়দ নামেই পরিচিত। সংগঠনটি তাঁরই মস্তিষ্কজাত। বাদল সৈয়দ জানালেন, এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প। ১৯৯৪ সালে বাদল সৈয়দ সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। কয়েক বছরের মাথায় তিনি তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে খোলেন ‘পে ব্যাক সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। এর কাজ ছিল ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে খুঁজে বৃত্তি দিয়ে পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনা। নীরবে এ কাজ চলেছে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ওই বছর বাদল সৈয়দকে তাঁর এক প্রবাসী বন্ধু জানালেন, বিশ্বব্যাপী পে ইট ফরওয়ার্ড নামে একটি আন্দোলন আছে। সে সম্পর্কে জেনে তিনি পুরোনো সংগঠনের নাম বদল করে রাখেন পে ইট ফরওয়ার্ড। ওই বছরের জুনে তিনি ফেসবুকে পে ইট ফরওয়ার্ড নামে পেজ খোলেন। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে ১১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয় সংগঠনটি।

অর্থের অভাবে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন কিংবা পরিবারকে দেখাশোনা করতে কারও চাকরির প্রয়োজন—এমন কোনো সমস্যায় পড়লে ভুক্তভোগী বা সদস্যদের কেউ তা পেজে তুলে ধরেন। পরে সংগঠন পরিচালনাকারী (অ্যাডমিন) তা যাচাই–বাছাই করেন। সব ঠিক থাকলে তাঁরা দাতাদের আহ্বান জানান সহযোগিতার জন্য। দাতাদের কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসেন। তবে কারও নজরে না এলে অ্যাডমিনরা নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর দাতাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া হয়।

প্রায় সব সেবামূলক সংগঠনের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নিজেদের মতো করে বণ্টন করে। পে ইট ফরওয়ার্ড কোনো ধরনের অর্থ নিজেরা গ্রহণ করে না। সাহায্যপ্রার্থীর সঙ্গে তারা সরাসরি দাতাদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। দাতাই তাঁর দেওয়া অর্থ ঠিকভাবে কাজে লাগছে কি না, তা নিশ্চিত করেন।

পে ইট ফরওয়ার্ডের সদস্যদের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে আরও কিছু ব্যতিক্রমী সেবা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অনেস্ট, মার্চ ফরওয়ার্ড, প্যারেন্টস লাউঞ্জ, উন্মুক্ত লাইব্রেরি সেবা অন্যতম। ‘অনেস্ট’ হচ্ছে একটি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, যেটি বাজারের চেয়েও কম দামে পণ্য সরবরাহ করে। এখান থেকে পাওনা অর্থ সামাজিক কল্যাণে ব্যয় হয়।

এর সদস্যসংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। ‘মার্চ ফরওয়ার্ড’ হচ্ছে একটি অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম। যেখান থেকে প্রতি মাসে মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ‘প্যারেন্টস লাউঞ্জ’ নামের সংগঠনে বয়স্ক মা-বাবাকে তাঁদের নিঃসঙ্গ অবসর জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য পরিত্রাণ দেওয়া হয়।

তবে এটি বৃদ্ধাশ্রম জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, এখানে সন্তান তাঁর মা-বাবাকে নিয়ে প্রতিদিন আসেন, কয়েক ঘণ্টা আনন্দে সময় কাটান। আবারও নিজের ঘরে ফিরে যান। এ সেবা পাওয়ার জন্য জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। চট্টগ্রামের জামালখানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি।